ডাইনি অপবাদে ক্রীড়াবিদ দেবযানী বোরাকে হত্যার চেষ্টার পর ৫ মাস কেটে গেলেও এখনও তাঁকে পুলিশ প্রহরায় থাকতে হচ্ছে। মৃত্যুর হাত থেকে কোনও ভাবে বেঁচে যাওয়া অন্য মহিলারাও নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। এই অবস্থায়, যত দ্রুত সম্ভব ডাইনি অপবাদ দিয়ে অত্যাচার ও হত্যা রোধে নতুন আইন বিধানসভায় পেশ করার দাবি জানালেন আক্রান্ত মহিলারা। আজ তাঁরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের উপরে হওয়া নারকীয় অত্যাচারের বিবরণ দেন।
দেবযানী দেবী জানান, ১৫ অক্টোবর নামঘরে তাঁর উপরে হওয়া অত্যাচারের পর তাঁর ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তায় ২২ জন পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। এখনও রয়েছেন ৯ জন পুলিশ প্রহরী। ঘটনার পরে, দু’মাস ধরে নিয়মিত রাতে তাঁদের বাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হত। এখনও তাঁদের বাড়িতে কোনও গ্রামবাসী আসে না। তাঁদের সঙ্গে কেউ কথা বলে না। সমাজকর্মী দিব্যজ্যোতি শইকিয়া জানান, এ বছর এখন অবধি রাজ্যে ডাইনি অপবাদে ৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১১ সালে নিহতের সংখ্যা ২৯। ২০১২ সালে ১১, ২০১৩ সালে ১৬ ও ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ৯। এই ঘটনা বেশি ঘটছে বড়োভূমি, শোণিতপুর, কার্বি আংলং ও মাজুলিতে।
ইতিমধ্যে ডাইনি অপবাদে হত্যা ও অত্যাচার রুখতে নতুন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। নতুন আইনে কোনও ব্যক্তিকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে চিহ্নিত করলে বা মানসিক নিগ্রহ করলে অথবা দৈহিক অত্যাচার করলে পুলিশ কোনও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারবে। শাস্তির মেয়াদ হবে তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন। ডাইনি অপবাদে অত্যাচারিত বা একঘরে হওয়া অথবা অন্য কোনও ভাবে বঞ্চিত হওয়া ব্যক্তিকে বা তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিও নতুন আইনে স্থান পাবে। যদি কোনও এলাকায় দলবদ্ধ ভাবে কাউকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে অত্যাচার চালানো হয়, তবে অত্যাচারে অংশ নেওয়া সকলের উপরেই জরিমানা চাপাবার জন্য নতুন আইনে ‘গোষ্ঠী জরিমানা’-র ধারাও থাকছে। এ নিয়ে খসড়া বিল তৈরি করেছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। কিন্তু চলতি বাজেট অধিবেশনে বিলটি পেশ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
শইকিয়া ও তাঁর সংগঠনের দাবি, কোনও ব্যক্তি তন্ত্রমন্ত্রের আশ্রয় নিয়ে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলে তার ন্যূনতম ১ বছরের সাজা ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হোক। কোনও বিশেষ ব্যক্তিকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করলে ৬ বছরের জেল ও ১৫ হাজার টাকা জরিমানা হোক। ডাইনি অপবাদে হত্যা করলে যাবজ্জীবন ও ৫০ হাজার অবধি জরিমানা হওয়া আবশ্যক। ডাইনি অপবাদের শিকার হওয়া পরিবারকে ও হত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিক সরকার। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যক্রম থেকেই অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে শিশুদের সচেতন করা হোক। সচেতনতা প্রসারে ধারাবাহিক প্রচারের ব্যবস্থা করক সরকার। এরই পাশাপাশি, যে সব সমাজকমী এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নিক পুলিশ।