—ফাইল চিত্র
‘দিলওয়ালো কি দিল্লি’। শহরটাকে চিনিও সে ভাবে। সেই ‘হৃদয়ে’ই এখন রক্তক্ষরণ। অজানা আশঙ্কাও ঘিরেছে দেশের রাজধানীকে।
আমার পড়াশোনা আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই সময়ে দিল্লি আমার কাছে ছিল সব থেকে প্রিয়। রাজনৈতিক মঞ্চে যোগ দিয়ে অনেক বার দিল্লিতে এসেছি। মাসখানেক আগেও দিল্লিতে এসে সুপ্রিম কোর্টে নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে গিয়েছি। তখন তো সব ঠিকঠাকই ছিল। হঠাৎ কী হয়ে গেল!
নতুন নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে দিল্লির শাহিনবাগের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ ছিল। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে সিএএ-র বিরুদ্ধে মামলার নথি তুলতেও দিল্লিতে আসা। কিন্তু দু’দিন এই শহরে যা দেখলাম, তাতে মনখারাপ হয়ে গেল।
মঙ্গলবার দিল্লিতে পৌঁছে প্রথমেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম। বিকেলে সিএএ-র বিরুদ্ধে একটি সংগঠনের ধর্নায় বক্তব্য রেখে রওনা দিয়েছিলাম অশোকনগরের দিকে। আমার সঙ্গে ছিলেন মহম্মদ বেলাল-সহ আরও তিন জন। বেলালের বাড়ি অশোকনগরে। কিন্তু মাঝরাস্তায় আটকে দিল পুলিশ। আমি গাড়িতে বসে। এক জনের নাম ও পরিচয়পত্র দেখেই ওই পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘ভাগো হিয়াঁসে।’’
আমি গাড়িতেই বসেছিলাম। কিন্তু পুলিশের এমন ব্যবহার দিল্লিতে এর আগে কখনও চোখে পড়েনি। গাড়ির মুখ ঘোরাতে না ঘোরাতেই বেলালের মোবাইলে ওঁর স্ত্রীর ফোন এল। উনি বললেন, বাজার গিয়েছিলেন। ফেরার পথে দেখলেন পুলিশ নাকি বাজারে পাথর ছুঁড়ছে। বেলাল তাঁর স্ত্রীকে মেট্রোয় আশ্রয় নিতে বললেন। সেখানে সুরক্ষিত থাকা যাবে। পরে লোক পাঠিয়ে তাঁকে বাড়ি ফেরানো হয়। দিল্লির মৌজপুর, অশোকনগরে পরিস্থিতি খুব খারাপ। সে সব এলাকায় দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। নিজের চোখে দেখেছি সব। কথা দিয়েছিলাম শাহিনবাগে যাব। গাড়ি নিয়ে শাহিনবাগে পৌঁছলাম। দেখলাম গোটা এলাকা আতঙ্কে। অনেকে বললেন, পুলিশ বলছে— ‘‘আন্দোলন তুলে নাও। না হলে ফৈজাবাদের মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ দায়িত্ব নেবে না।’’ সোশ্যাল মিডিয়াতেও হুমকি আসছে, ফৈজাবাদের মতো হাল করা হবে শাহিনবাগেরও। তবুও শাহিনবাগ দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছে।
আমি জানি, রাজধানীর আমজনতা খুব তাড়াতাড়ি শহরের এই রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এগোবেন। সবার যৌথ প্রয়াসে ফের হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হোক দিল্লির। এটাই চাই আমি।