দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। ছবি: পিটিআই।
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল কী করছেন!
তিন দিন ধরে জ্বলছে দিল্লির বিস্তীর্ণ অংশ। কিন্তু কাল টুইট করে শান্ত থাকার আবেদন আর আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়া কেজরীবালের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে নিরন্তর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে জনমানসে। আজ কেজরী তেগবাহাদুর হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন বটে। কিন্তু তার পর ‘দয়া করে এই উন্মত্ততা বন্ধ করুন’ বলে শান্তির আহ্বান জানানো ছাড়া কিছুই তেমন বলেননি। কেজরীর ভূমিকার সমালোচনা করে কংগ্রেস বলেছে, প্রকৃত নেতার মতো কেজরীবালের উচিত ছিল দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে শান্তির আবেদন জানানো। তা না করে তিনি রাজঘাটে গিয়ে বসেছেন! কেজরীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন খোদ তাঁর দলেও।
দিল্লিতে গোষ্ঠীসংঘর্ষে ইতিমধ্যেই নিহতের সংখ্যা দশ পেরিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে আজ সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন অমিত শাহ। মন্ত্রক সূত্রের খবর, বৈঠকের পরে উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন, পুলিশের পদস্থ কর্তাদের দিয়ে ফ্ল্যাগমার্চ, উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানা সীমানায় বাড়তি নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়। মোতায়েন হয় আধাসেনা। বস্তুত পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশি ব্যর্থতার প্রশ্নও বারবারই উঠছে। সেই সূত্রে প্রশ্নের মুখে অমিতের ভূমিকাও।
এ দিন অবসরের পরে এক মাসের বর্ধিত মেয়াদে থাকা পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়েককে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও প্রায় নিয়ে ফেলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ সিআরপিএফের স্পেশাল ডিজি সচ্চিদানন্দ শ্রীবাস্তবকে দিল্লির বিশেষ কমিশনার (আইনশৃঙ্খলা) পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত তিনিই হচ্ছেন পরবর্তী পুলিশ কমিশনার। আজ উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে বিশাল বাহিনী নামিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। ফলে দেখামাত্র গুলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: চার জায়গায় দেখলেই গুলি, আতঙ্কে কাঁপছে দিল্লি, নিহত ১৩
কিন্তু এমন সময়ে কেজরীবাল কেন কেন্দ্রের প্রতি নরম মনোভাব নিচ্ছেন, তার জুৎসই ব্যাখ্যা দিতে পারছেন না দলের নেতারাই। চলতি মাসেই বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জনাদেশ পেয়ে জিতে এসেছেন তিনি। ভোটের আগে শাহিন বাগ নিয়ে তাঁর নীরবতাকে বিজেপির ফাঁদে পা না দেওয়ার কৌশল বলে দেখা হচ্ছিল। তবু তখনও এক বার বলেছিলেন, পুলিশ তাঁর হাতে থাকলে অনেক আগেই রাস্তা খালি করে দেওয়া হত! জিতে আসার পরে এই সময়ে অমিত শাহের অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশ তথা কেন্দ্রের ব্যর্থতা নিয়ে আন্দোলনে নামতে পারতেন তিনি। দিল্লি পুলিশকে দিল্লি সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদার দাবিকে নতুন করে উস্কে দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সে সব দূর অস্ত্, দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সামান্য সমালোচনার পথেও হাঁটতে দেখা গেল না কেজরীকে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকের শেষে শান্তির আবেদন জানিয়ে রাজঘাটে গাঁধী সমাধিতে গিয়ে ধর্নায় বসেন তিনি। অমিতের ‘ব্যর্থতা’র কথা তাঁর মুখে শোনা যায়নি একবারও।
অতীতে অণ্ণা হাজারে ও কেজরী যখন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তখন তাঁদের পিছনে সঙ্ঘ পরিবার তথা বিজেপির পরোক্ষ সমর্থন ছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। অনেকেই বলছেন, কেজরীবাল এখন যা করছেন, তা দেখে মনে হচ্ছে তিনি বিজেপির বি টিমে পরিণত হয়েছেন। অনেকেই মনে করছেন, পরিকল্পিত ভাবেই নীরব রয়েছেন কেজরীবাল।
আপ নেতৃত্বের একাংশের ব্যাখ্যা, কেজরী জানেন দিল্লি পুলিশ তাঁর হাতে নেই। খাতায়কলমে মুখ্যমন্ত্রী হলেও, তিনি বাস্তবে ক্ষমতাহীন। ফলে তাঁর পক্ষে প্রার্থনা করা ছাড়া অন্য কিছু সম্ভব নয়। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝেই চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেজরীবাল। সদ্য ক্ষমতায় এসেছেন। সামনে পড়ে রয়েছে পাঁচ বছর। শুরুর দিন থেকেই কেন্দ্রকে না চটানোর যে কৌশল নিয়েছেন তিনি, সেই সূত্র মেনেই তাঁর চুপ থাকার সিদ্ধান্ত, দাবি দলের একাংশের।