প্রবীণ: দিল্লি বিধানসভার ভোটে ১১১ বছরের কালীতারা মণ্ডল। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
প্রথম ভোট কবে দিয়েছিলেন মনে পড়ছে?
সে তো দেশভাগের আগে!
তাঁর কোঁচকানো চামড়ার আঙুলের দিকে চিত্র সাংবাদিকদের ক্যামেরা তাক করে ছিল। চিত্তরঞ্জন পার্কে পুরসভার প্রাইমারি স্কুল থেকে হুইল চেয়ারে চেপে বার হয়ে কালির ছাপ দেওয়া আঙুলটা তুললেন কালীতারা মণ্ডল।
বয়স ১১১ বছর। চিত্তরঞ্জন পার্কের কালীতারা এ বারের দিল্লি বিধানসভা ভোটের প্রবীণতম ভোটার।
আরও পড়ুন: প্রথম ভোট কেজরী, প্রিয়ঙ্কার ছেলেদের
ভোটের শেষবেলায় শাহিন বাগের প্রতিবাদের পিছনে দেশ বিভাজনের নকশা রয়েছে, এই প্রচার করে বিজেপি মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছে। রাজধানীর ভোটে সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে মেরুকরণের হাতিয়ার করার চেষ্টা হয়েছে।
কালীতারার জন্ম বঙ্গভঙ্গের তিন বছর পরে, ১৯০৮-এ। অবিভক্ত ভারতের বরিশালে। সামনের এপ্রিলে ১১২-য় পা দেবেন। নিজে ভোট দিয়েছেন। বাড়ির সবাইকেও কুঁড়েমি না-করে ভোট দিতে বলেন। একটা দাঁতও অবশিষ্ট নেই মুখে। কিন্তু ফোকলা মাড়িতে এখনও সুযোগ পেলেই পান চিবোন। আর এখনও মাছ খান তৃপ্তি করে। বিশেষ করে ইলিশ। নাতি-নাতনিরা বলেন, ওই জন্যই বোধ হয় এখনও চোখের দৃষ্টি দুর্বল হয়নি। স্মৃতিশক্তিও হারায়নি।
একা কালীতারা নয়, দিল্লির বিধানসভা ভোটে এ বার ১৩২ জন শতায়ু ভোটার। তার মধ্যে ৬৪ জন মহিলা। সেঞ্চুরি পার করে ফেলা ভোটারদের জন্য নির্বাচন কমিশন বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল। তাঁদের একেবারে ‘ভিআইপি’ মর্যাদায় ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। গত বছর লোকসভা ভোটের সময় প্রবীণতম ভোটার ছিলেন তিলক নগরের বচ্চন সিংহ। ১১১ পার করে ফেলা বচ্চন ডিসেম্বরে মারা যান। এখন কালীতারাই প্রবীণতম।
কালীতারার সাত সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই প্রয়াত। মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তান আমলে প্রথম স্বামী-সন্তানদের নিয়ে দেশের বাড়ি ছেড়েছিলেন। বেশ কিছু দিন অন্ধ্রের রিফিউজি ক্যাম্পে কাটিয়ে ফের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বরিশালে ফিরে যান। কিন্তু ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পরে ছত্তীসগঢ়ের শরণার্থী শিবিরে ফের আশ্রয় নিতে হয়। তার পর দুই ছেলে দিল্লিতে চাকরি করতে এলে বাঙালিপাড়া চিত্তরঞ্জন পার্কই পাকাপাকি ঠিকানা হয়ে যায় বৃদ্ধার।
কালীতারার মনে পড়ে, সে সময় কংগ্রেসের লোকেরা রিফিউজি ক্যাম্পে ভোট চাইতে আসত। এক বার ইন্দিরা গাঁধীর জন্য ভোট দিয়েছেন, সে কথা মনে পড়ে। গত বার লোকসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। এ বার দিল্লিতে কারা লড়ছেন? কালিতারা উত্তর দেন, ‘‘ওই তো হাত আর ফুল!’’