মুম্বইতে একটি ‘ডেটিং অ্যাপের’ মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল শ্রদ্ধা এবং আফতাবের। ফাইল চিত্র ।
ভুলে যেয়ো আমি তোমাদের মেয়ে— আফতাবের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে মাকে এমনটাই জানিয়েছিলেন প্রেমিকের হাতে খুন হওয়া শ্রদ্ধা ওয়াকার। দিল্লির মেহরৌলিতে শ্রদ্ধাকে নৃশংস ভাবে খুন করে দেহ ৩৫ টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁরই প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে। খুনের নৃশংসতায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। শ্রদ্ধা মহারাষ্ট্রের পালঘরের মেয়ে। মেয়ের এই করুণ পরিণতিতে ভেঙে পড়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ ওয়াকার পুলিশকে বলেন, “মেয়ে ২০১৯ সালে আমার স্ত্রীকে বলেছিল যে, সে আফতাবের সঙ্গে একত্রবাস করতে চায়। আমার স্ত্রী এবং আমি তার এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিইনি। আমরা হিন্দু এবং ও যার সঙ্গে সম্পর্কে থাকতে চেয়েছিল সে এক জন মুসলিম। আমরা আন্তঃধর্ম বিয়েতে রাজি ছিলাম না।”
এর পরই শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁর মা-বাবার সম্পর্কে চিড় ধরে। বাবা-মা প্রেম মেনে না নেওয়ায় পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতেও রাজি হয়ে যান শ্রদ্ধা।
বিকাশ আরও বলেন, ‘‘আমাদের মত না থাকা সত্ত্বেও, মেয়ে (শ্রদ্ধা) আমাদের বলেছিল, ‘আমি এখন ২৫ বছর বয়সি এক জন স্বাধীনচেতা মেয়ে এবং আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্ত অধিকার আছে। আমাকে আফতাবের সঙ্গে থাকতে হবে। আজ থেকে ভুলে যেয়ো যে আমি তোমাদের মেয়ে।’ এর পর নিজের জামাকাপড় নিয়ে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং আফতাবের সঙ্গে থাকতে চলে যায়।’’
এই ঘটনার পর থেকেই তাঁদের সঙ্গে শ্রদ্ধা বিশেষ যোগাযোগ রাখতেন না বলেও শোকতপ্ত বিকাশ জানিয়েছেন।
দক্ষিণ দিল্লির অতিরিক্ত ডিসিপি-১ অঙ্কিত চৌহান বলেছেন, মুম্বইতে একটি ‘ডেটিং অ্যাপের’ মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিল শ্রদ্ধা এবং আফতাবের। তাঁরা তিন বছর ধরে একত্রবাস করছিলেন এবং দিল্লিতে চলে গিয়েছিলেন। দিল্লিতে চলে যাওয়ার পরপরই, আফতাবকে বিয়ের কথা বলতে থাকেন শ্রদ্ধা। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত এবং তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। এর পর ১৮ মে আফতাব মেজাজ হারিয়ে শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেন।
ওয়েব সিরিজ় ‘ডেক্সটার’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রদ্ধার মৃতদেহ ৩৫ টুকরো করেন অভিযুক্ত আফতাব। এর পর ছতরপুর ছিটমহলের জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় সেই দেহের টুকরোগুলি ফেলে দেন। দিল্লি পুলিশ শনিবার আফতাবকে গ্রেফতার করেছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।