দেশ জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমেছে দিল্লি পুলিশের কুড়িটি দল। —ফাইল চিত্র।
শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এ বার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করল মহারাষ্ট্র সরকার। মঙ্গলবার এই ঘোষণা করেছেন মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। তিনি জানিয়েছেন, এই মামলায় অভিযোগ দায়ের করতে পুলিশ অযথা দেরি হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবে সিট।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, বছর দুয়েক আগে মহারাষ্ট্রে থাকাকালীন আফতাব আমিন পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে তাঁকে মারধর ও খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন শ্রদ্ধা। ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর পালঘর শহরের তুলিঞ্জ থানায় জমা দেওয়া চিঠিতে শ্রদ্ধা লিখেছিলেন, ‘‘ছ’মাস ধরে আমাকে মারধর করছে ও (আফতাব)।’’ তাঁকে খুন করে টুকরো করার হুমকিও দিচ্ছেন বলে আফতাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন শ্রদ্ধা। মারধর এবং হুমকির কথা আফতাবের পরিবার জানত বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। যদিও সেই চিঠিটি শেষমেশ প্রত্যাহার করে নেন শ্রদ্ধা।
মঙ্গলবার ফডণবীস জানিয়েছেন, ওই চিঠিটি প্রত্যাহার করার পিছনে শ্রদ্ধার উপর কোনও রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা হয়েছিল কি না, সে বিষয়েও তদন্ত করবে সিট। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই খুনের মামলাটি যাতে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে নিষ্পত্তি করা হয়, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে দরবার করবে মহারাষ্ট্র সরকার।
১৮ মে দিল্লির মেহরৌলির ছতরপুর এলাকায় নিজেদের ভাড়াটে ফ্ল্যাটে শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর প্রেমিক আফতাবের বিরুদ্ধে। আফতাবের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, খুনের পর দিন কয়েক ধরে শ্রদ্ধার দেহ ৩৫ টুকরো করেন তিনি। এর পর প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে ওই দেহাংশগুলি একটি ফ্রিজ়ে রেখেছিলেন। যা পরের ১৮ রাত ধরে মেহরৌলির জঙ্গলের বিভিন্ন প্রান্তে ফেলতে যেতেন তিনি।
দেশ জুড়ে শোরগোল ফেলে দেওয়া এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমেছে দিল্লি পুলিশের কুড়িটি দল। দিল্লির ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মিলে তদন্তে শামিল দু’শোর বেশি পুলিশকর্মী ও আধিকারিক। এই মামলায় অভিযুক্ত আফতাবের স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও তাঁকে খুনি হিসাবে প্রমাণিত করতে আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করতে হবে তদন্তকারীদের।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, মেহরৌলির জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া ১২টি হাড়গোড়গুলির সঙ্গে শ্রদ্ধার বাবার ডিএনএ নমুনা মিলে গিয়েছে। ফলে ওই হাড়গোড়গুলি যে শ্রদ্ধার, সে বিষয়ে নিশ্চিত তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, আফতাবের পলিগ্রাফ টেস্টের রিপোর্টও বুধবার ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে জমা করা হয়েছে। যদিও এই তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে মহারাষ্ট্র পুলিশের শীর্ষকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন শ্রদ্ধার বাবা বিকাশ মদন ওয়ালকর। গত সপ্তাহে মীরা ভায়ন্দর-বসই বিহার (এমবিভিভি)-এর নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার মধুকর পাণ্ডের সঙ্গে দেখা করেন বসই এলাকার বাসিন্দা বিকাশ। এই মামলার তদন্তে তাঁকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।