ছন্দে ফিরছে দিল্লি, তবে পরীক্ষা নববর্ষে

বহু দিন পরে আবার মুখে হাসি রুবি-রাজ্জো-বিট্টুদের। দিল্লির আইটিও ক্রসিংয়ে মাদারির খেলা দেখায় ওরা ক’জন। পেট চলে গাড়ি থেকে উড়ে আসা দাক্ষিণ্যে। গত এক মাস সময়টা বড় খারাপ গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share:

রিজার্ভ ব্যাঙ্কে নোট বদলানোর ভিড়। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

বহু দিন পরে আবার মুখে হাসি রুবি-রাজ্জো-বিট্টুদের। দিল্লির আইটিও ক্রসিংয়ে মাদারির খেলা দেখায় ওরা ক’জন। পেট চলে গাড়ি থেকে উড়ে আসা দাক্ষিণ্যে। গত এক মাস সময়টা বড় খারাপ গিয়েছে। ব্যাপারটা বুঝে ওরাও বলছে, ‘‘লোকের হাতেই টাকা নেই, আমাদের দেবে কী করে?’’ কিন্তু গত দিন সাতেকে ধীরে ধীরে ওদের মুখের হাসি চওড়া হচ্ছে আবার। চিটচিটে, ন্যাতা হয়ে যাওয়া জামার ফাঁক থেকে আবার উঁকি মারছে পাঁচ-দশ টাকার নোট।

Advertisement

নোট বাতিলের পরে প্রথম ক’দিন গোটা দেশে হাহাকারের যে ছবিটা দেখা যাচ্ছিল, তার ব্যতিক্রম ছিল না দিল্লিও। নগদের অভাবে হাপিত্যেশ করে এক এটিএম থেকে অন্য এটিএমে ঘুরে বেড়িয়েছে রাজধানীর মানুষ। সংসদ ভবন থেকে খোদ অর্থ মন্ত্রকের চৌহদ্দির এটিএম, সবর্ত্রই ছিল একটাই উত্তর— ‘নো ক্যাশ’। তবে গত এক মাসে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি। বিশেষ করে গত দশ দিনে টাকার সরবরাহ অনেকটাই বেড়েছে রাজধানী-সহ গোটা ‘ন্যাশনাল ক্যাপিটাল’ (এনসিআর) এলাকায়। এটিএমে লাইন রয়েছে ঠিকই, কিন্তু আড়েবহরে অনেক কম।

গত ৮ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদীর তোলপাড় ফেলা ঘোষণার পঞ্চাশ দিনের মাথায় আজ, লক্ষ্মীনগরের কোটাক মহীন্দ্রা, ময়ূর বিহার ফেজ-থ্রির সামনে এসবিআই, কিংবা কনট প্লেসের বি ব্লকের অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে গড়ে লোক দাঁড়িয়ে ৮ থেকে ১০ জন। আড়াই হাজার টাকার কড়কড়ে নোট গুনে বেরিয়ে আসছেন গ্রাহকেরা। পুরনো নোট জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যাঙ্কে সেই গিজগিজে ভিড়ও নেই। গোড়ার দিকে নগদের অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া আজাদপুরের আনাজের বাজারে ফের শুরু হয়েছে বিক্রিবাটা। গাজিপুরের মাছের বাজারেও দেখা মিলছে ক্রেতাদের।

Advertisement

সব দেখেশুনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি আজ দাবি করেছেন, পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক। তাঁর কথায়, ‘‘গত কাল রাতে আমি দিল্লিতে ঘুরে দেখেছি। রাজধানীর পরিস্থিতি অনেক স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এটিএমে ভিড় কমে এসেছে। তাই সংবাদমাধ্যমের কাছে অনুরোধ, আগামিকাল থেকে যেন আগামিকালের ছবিই দেখানো হয়। ১০ নভেম্বর এটিএমের সামনে যে ভিড় ছিল, সেই পুরনো ছবি দেখিয়ে মানুষকে যেন বিভ্রান্ত করা না হয়। ’’

এ কথা ঠিক যে, এটিএমে টাকা এসেছে, বেড়েছে নগদের জোগান। আজ রাতেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে, ১ জানুয়ারি থেকে দৈনিক টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বেড়ে হচ্ছে ৪৫০০ টাকা। সাপ্তাহিক ঊর্ধ্বসীমা ২৪ হাজার টাকাই থাকছে। কিন্তু এত দিন ধরে ২৫০০ টাকার দৈনিক ঊর্ধ্বসীমা বহাল থাকায় ক্রমশ খরচে রাশ টানতে বাধ্য হয়েছে দিল্লির আমজনতা। ফলে ব্যবসা যে কমেছে, তা মেনেই নিচ্ছেন ছোট দোকানদার থেকে পাঁচতারা হোটেলের ম্যানেজারেরা। সকলেরই বক্তব্য, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বটে, কিন্তু মানুষ আগের চেয়ে সাবধানে টাকা খরচ করছে। তারা মনে করছে, নতুন বছরের শুরুতে বেতনের টাকা তুলতে এখনও সমস্যা হতে পারে। মুদির দোকানে বকেয়া টাকাও হয়তো একলপ্তে মেটানো যাবে না। তা বুঝতে পেরেই খরচে লাগাম দিয়েছেন অনেকে।

যার প্রভাব পড়েছে বর্ষবরণ উৎসবেও। নোট বাতিলের চক্করে পকেটের উষ্ণতা যত কমেছে, ততটাই যেন বেড়েছে পরিবেশের। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের শীতের কামড় দিল্লিতে এ বার কার্যত উধাও। দেখা নেই দশ দিক ছেয়ে নেমে আসা কুয়াশারও। ফি-বছর ঠান্ডার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হুল্লোড়ে মেতে ওঠা দিল্লির পরিচিত ছবিটা কোথাও যেন ধাক্কা খেয়েছে। বিভিন্ন বড় হোটেলে বর্ষবরণ উৎসবের ব্যবস্থা থাকছে বটে, কিন্তু তাতে অন্য বারের মতো সাড়া পড়েনি। আকর্ষণীয় ছাড়েও সাড়া দিচ্ছেন না দিল্লির মানুষ।

এই অবস্থায় অনেকে বলছেন, নতুন বছরের গোড়ায় ব্যাঙ্কে-এটিএমে লাইনের দৈর্ঘ্য কেমন হয়, নোটের অভাবের অভিযোগ ওঠে কি না, তার ওপরেই নির্ভর করছে অনেক কিছু। জানুয়ারির গোড়ায় বেতন তোলার সময়ে কয়েকটা দিন যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা হলেই পুরোপুরি বলা যাবে, ছন্দে ফিরেছে দিল্লি। বর্ষশেষের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে কোনও বাড়তি সুরাহা দেন কি না, সেটাও এখন দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement