ফাইল চিত্র।
ভিক্ষে করে, ধার করে, চুরি করে— যে ভাবে হোক, মোদী সরকারকে দেশের হাসপাতালে অক্সিজেন জোগাতেই হবে বলে আজ নির্দেশ দিল দিল্লি হাই কোর্ট।
রাজধানী দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেনের হাহাকারের মধ্যে আজ মোদী সরকারকে দিল্লি হাই কোর্ট মনে করিয়ে দিয়েছে, গুরুতর অসুস্থ নাগরিকের জীবনের অধিকার রক্ষা করা কেন্দ্রেরই দায়িত্ব। যাঁদের অক্সিজেন প্রয়োজন, তাঁদের যে কোনও উপায়ে অক্সিজেন জোগাতে হবে। তা সে সড়ক পথে পরিবহণের জন্য বিশেষ করিডর তৈরি করেই হোক, বা বিমানে।
দিল্লিতে অক্সিজেনের অভাব ও অন্য রাজ্যে দিল্লির জন্য বরাদ্দ অক্সিজেন পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে গত কালই দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি এবং বিচারপতি রেখা পাল্লি বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা এই কাজ করছেন, তাঁদের হাতে রক্তের দাগ লেগে থাকবে।’’ বুধবার দুপুর থেকেই রাজধানীর একের পর এক বড় হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে। সন্ধ্যায় দিল্লির পটপরগঞ্জের ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জানান, তাঁদের কাছে মাত্র তিন ঘণ্টার অক্সিজেন রয়েছে। ৪০০ রোগীর মধ্যে ২৬২ জনের জীবন বিপন্ন।
রাতেই জরুরি ভিত্তিতে শুনানিতে বিচারপতিরা মনে করিয়ে দেন, একটি মাত্র হাসপাতাল হাই কোর্টে এসেছে। অন্য হাসপাতালেও অভাব রয়েছে। গোটা দেশেই সমস্যা রয়েছে। কেন্দ্র কেন এ বিষয়ে আগে ভাবেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা। বলেন, “এর অর্থ হল, রাষ্ট্রের কাছে মানুষের জীবনের তেমন গুরুত্ব নেই। আমরা হতভম্ব যে, সরকার অক্সিজেনের প্রয়োজন নিয়ে ভাবে না।” অক্সিজেনের জোগান বন্ধ হয়ে গেলে ‘নারকীয় পরিস্থিতি’ তৈরি হবে বলে জানান বিচারপতিরা।
কেন্দ্রীয় সরকার দু’দিন আগে ইস্পাত ও পেট্রো-রসায়ন বাদে সমস্ত শিল্পের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ নিষিদ্ধ করে চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন জোগানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত-ও নেয়, যে সব ইস্পাত সংস্থার নিজস্ব অক্সিজেন উৎপাদন ব্যবস্থা রয়েছে, তাদের তা বাইরে থেকে জোগানো হবে না। আজ বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, “এখনও কেন্দ্র ওই সংস্থাগুলির থেকে অক্সিজেন নিচ্ছে না কেন? আমরা বিস্মিত যে, হাসপাতালে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাচ্ছে অথচ ইস্পাত কারখানায় অক্সিজেন যাচ্ছে। কেন সরকারের ঘুম ভাঙছে না? আমরা মানুষকে মরতে দিতে পারি না।” কোর্টের নির্দেশ, সমস্ত ইস্পাত কারখানা থেকে অক্সিজেন চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে পেট্রোলিয়াম কারখানা থেকেও অক্সিজেন পাঠাতে হবে। তাতে প্রয়োজনে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে।
আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও বণিকসভা সিআইআই-এর সঙ্গে বৈঠকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিদেশ থেকে আমদানি করে, ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন করে, নাইট্রোজেনের কন্টেনার অক্সিজেন সরবরাহে ব্যবহার করতে দিয়ে অক্সিজেনের জোগান বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাতে হাই কোর্টের বিচারপতিরা জানতে চান, অক্সিজেন আমদানির কী হল? কেন্দ্র জানায়, দরপত্রে তিন-চারটি সাড়া মিলেছে। বিচারপতিরা তখন বলেন, অক্সিজেন আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের ইস্পাত কারখানাগুলির নিজস্ব প্রয়োজনে তৈরি অক্সিজেন চিকিৎসার জন্য পাঠানো যাচ্ছে না! যদি টাটা গোষ্ঠী নিজেদের অক্সিজেন পাঠাতে পারে, তা হলে বাকিরা পারবে না কেন? এ তো লোভের চূড়ান্ত! মানবিকতার কি কিছুই অবশিষ্ট নেই? কেন্দ্রের আর্জি ছিল, বৃহস্পতিবার সকালে যেন নির্দেশ জারি হয়। কিন্তু বিচারপতিরা কেন্দ্রকে আধ ঘণ্টা সময় দিয়ে বিরতির পরে শুনানি শুরু করেন। বিচারপতিদের প্রশ্ন ছিল, রাতেই দিল্লির হাসপাতালে অক্সিজেন ফুরিয়ে গিয়ে বহু মানুষ মারা গেলে তার দায় কে নেবে? বৃহস্পতিবার ফের শুনানি হবে।