ছবি: সংগৃহীত।
কেউ বলছেন, ‘আম আদমি জিন্দাবাদ’। কেউ আবার খুশি জাতপাত ও ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি হেরে গিয়েছে বলে। রাজধানীতে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক করে ফেলা অরবিন্দ কেজরীবালের সাফল্যে এ ভাবেই উচ্ছ্বসিত তাঁর পুরনো প্রতিষ্ঠান খড়্গপুর আইআইটি-র পড়ুয়ারা। ভারতীয় রাজনীতির ‘মাফলার ম্যান’ ক্যাম্পাস ছেড়েছেন তিন দশক আগে। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী থেকে বর্তমান পড়ুয়া, কেজরীকে নিয়ে আবেগ কমেনি এতটুকু।
১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯। খড়্গপুর আইআইটি-র মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র ছিলেন কেজরীবাল। থাকতেন নেহরু হলে। ওই হলের বর্তমান আবাসিক সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া সহর্ষ আগরওয়াল বলছিলেন, “দু’-তিনদিন ধরেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আমাদের নেহরু হলের বন্ধুদের মধ্যে চর্চা চলছিল। অরবিন্দ এই হলেই থাকতেন। তাই ওঁর জয়ে একটা বাড়তি আনন্দ তো আছেই।” ভূতত্ত্ব বিভাগের গবেষণারত ছাত্র অর্কপ্রভ মুখোপাধ্যায় আবার বলছেন, ‘‘প্রাক্তনী জিতেছেন বলে আনন্দিত। তবে আরও বেশি খুশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের মতো মৌলিক দাবিগুলোর কাছে জাতপাত আর ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি হেরে গিয়েছে বলে।’’
কেজরীবালের সময়ে তাঁর বিভাগের শিক্ষকদের কেউই আর এখন খড়্গপুরে নেই। তিনি প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময়ও যিনি ছিলেন, সেই শঙ্করকুমার সোম গত ১৪ জানুয়ারি মারা গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী বনানী সোম এ দিন বলেন, “২০১২ সালের প্রাক্তনী পুনর্মিলন অনুষ্ঠান প্যান আইআইটিতে আমার স্বামী ও আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল অরবিন্দের। তখনই উনি নামী। অথচ কত অমায়িক। এই প্রত্যাবর্তনে ওঁকে শুভেচ্ছা জানাই। আমার স্বামী থাকলে সত্যি খুব খুশি হতেন।” তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আইআইটিতে কেজরীবালের আর এক সমসাময়িক ছাত্র, বর্তমানে রাজ্যের পুর-নগরোন্নয়ন সচিব সুব্রত গুপ্তও। কেজরীবালের বিভাগের প্রাক্তনী দুর্গাপুরের সিএমইআরআই-এর গবেষক সীতাংশু চক্রবর্তী আবার বলছেন, “দিল্লির ভোটে মানুষ যে বার্তা দিয়েছে তা কেন্দ্রীয় সরকারকেও ভাবতে হবে।”
আরও পড়ুন: গণ-আদালতে খারিজ বিদ্বেষ, কঠোর কোর্টও
ভাবিয়েছেন কেজরীবাল নিজেই। দেশের সেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে পড়েও ছক ভেঙে রাজনীতিকে ভবিষ্যৎ বাছাটা নাড়া দেয় এখনকার ছাত্রছাত্রীদেরও। তবে এমন ব্যতিক্রমী হয়েও মানুষটা যে বদলাননি তা মানছেন তাঁকে কাছ থেকে দেখা সকলেই। খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী তথা দিল্লি আইআইটির মেক্যানিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক অঞ্জন রায় বলছিলেন, “আমি ও কেজরী একই বিভাগ থেকে একই সালে পাশ করেছি। ২০১৮ সালের মে মাসে বন্ধুরা একসঙ্গে কেজরীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী হয়েও মন থেকে সেই একই রয়ে গিয়েছে।” ‘বাংলা নাটক ডট কম’-এর প্রতিষ্ঠাতা অমিতাভ ভট্টাচার্য আবার জুড়লেন, “আমাদের দু’জনের বিভাগ আলাদা হলেও একই বর্ষের ছাত্র হওয়ায় বন্ধুত্ব ছিল। এখনও বন্ধুত্ব রয়েছে। অরবিন্দ ভাল হিন্দি নাটক করত। গত বছর জানুয়ারিতে দেখা হয়েছিল।”
কৃতী প্রাক্তনীকে খড়্গপুর সম্মানিত করেছে আগেই। তখন ২০০৯ সাল। সরকারি চাকরি ছেড়ে কেজরীবাল তখন তথ্য জানার অধিকার আইনের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন। সেই বছরই তাঁকে ‘ডিস্টিংগুয়িশড অ্যালামনি অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল খড়্গপুর আইআইটি। তারও আগে ২০০৫সালে কানপুর আইআইটিও সামাজিক আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘সত্যেন্দ্র দুবে স্মৃতি পুরস্কার’-এ সম্মানিত করেছিল। খড়্গপুর আইআইটি-র রেজিস্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহ বলেন, “রাজনীতির সঙ্গে আমাদের যোগ নেই। তবে আমাদের যে কোনও পড়ুয়ার সাফল্যই আমাদের কাছে আনন্দের। তাই অরবিন্দর সাফল্যেও আমরা খুশি।”
সহ-প্রতিবেদন: মধুমিতা দত্ত