উল্লাস: আপের দফতরের সামনে দলীয় সমর্থকেরা। মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই
দূর থেকেই আড়চোখে দেখে নিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে চাননি রাহুল গাঁধী। দ্রুত উঠে গেলেন গাড়িতে। শরীর ‘ঠিক আছে’ জানিয়ে চলে গেলেন সনিয়া গাঁধীও।
দুপুরের পর সংসদের ঘটনা। দিল্লির ফল তখন স্পষ্ট। পরপর তিন বার অরবিন্দ কেজরীবাল। ধরাশায়ী কংগ্রেস। শূন্য থেকে এক হচ্ছে, পরমুহূর্তে আবার শূন্যে ফেরত।
দিনের শেষ। ৭০টি আসনে ষাটের বেশি কংগ্রেস প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত। সন্ধেয় টুইট করে কেজরীবালকে অভিনন্দন জানালেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু ভোটের পর এই প্রথম বার ঝড় উঠল কংগ্রেসে।
আরও পড়ুন: ‘শাহ-হীন বাগে’র মঞ্চে প্রতিবাদী মৌনব্রত
যে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে সামনে রেখে ভোট প্রচার করল কংগ্রেস, তাঁর ছেলে সন্দীপকেই কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল। আজ ক্ষোভ উগরে সন্দীপ দীক্ষিত বললেন, নেতাদের ‘অপদার্থতা’র খেসারত দিতে হল দলকে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় অভিনন্দন জানান কেজরীকে। কিন্তু তাঁর কন্যা দিল্লির কংগ্রেস নেত্রী শর্মিষ্ঠা টুইট করলেন, ‘‘কংগ্রেস আবার মাটিতে মিশল। আত্মসমালোচনা ঢের হয়েছে, এখন কাজের সময়। দলের শীর্ষে যাঁরা, সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেন। কৌশল নেই। ঐক্য নেই। কর্মীরা হতাশ। জমির সঙ্গে যোগ নেই।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
কেজরীবাল জিতছেন, অমিত শাহরা লড়াই করছেন— ভোটের আগে এমন পরিস্থতিতে কংগ্রেসের নিষ্ক্রিয়তা দেখে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠছিল। অনেকেই বলছিলেন, ‘‘আমাদের এ কেমন দল? জেতার কোনও আগ্রহ নেই, হারেও শোক নেই! রাহুল-প্রিয়ঙ্কা শেষ মূহূর্তে প্রচারে নামলেন। রাহুল আবার প্রধানমন্ত্রীকে ‘লাঠিপেটা’ করার কথা বলে বিজেপিকেই অস্ত্র দিলেন!’’
বিজেপির অনেকের আশঙ্কা, কংগ্রেসের নিষ্ক্রিয়তায় ভোট অন্যত্র যাচ্ছে। বাংলাতেও কংগ্রেসের ভোট মমতার দলে যাবে না তো? বাংলায় বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বললেন, ‘‘বঙ্গে মেরুকরণ হবে।’’ দিল্লিতে কিছু কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থীরা যেখানে উদ্যোগী হয়েছেন, বিজেপি ভাল করেছে। রাজ্যসভার সাংসদ কে টি এস তুলসী বলেন, ‘‘হতে পারে কংগ্রেসের কৌশলই এটি। বেশি সক্রিয় হলে তো বিজেপির লাভ।’’ বিজেপির শাহনওয়াজ হোসেন অভিযোগ করলেন, ‘‘কংগ্রেস ও আপের সমঝোতা স্পষ্ট।’’
দলে বিদ্রোহ দেখে আজ সাংবাদিক বৈঠক করতে এক গাড়িতে এলেন রাজ্য সভাপতি সুভাষ চোপড়া, প্রচার কমিটির প্রধান কীর্তি আজাদ ও দিল্লির দায়িত্বে থাকা নেতা পি সি চাকো। যাঁরা এমনিতে কেউ কারও মুখ দেখতে চান না বলে অভিযোগ। সবাই দায় নিলেন। চোপড়া ইস্তফা দিলেন। কীর্তি বললেন, ‘‘প্রচার শেষ হতেই প্রচার কমিটির কাজ শেষ। তবু ইস্তফা দেব।’’ আর সন্দীপ-শর্মিষ্ঠাদের কথা শুনে রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বললেন, ‘‘আমি একমত নই। সকলের কথা শোনা হবে। কংগ্রেস শূন্য থেকেই শুরু করবে।’’ কবে, প্রশ্ন সেটাই।