ছবি: পিটিআই।
হাওয়া মানে হাওয়াবাজি। বুথফেরত সমীক্ষার পর থেকেই কথাটা ঘুরছিল। আজ ফল বেরনোর পরে সেটা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল!
বিজেপির পক্ষে প্রবল ‘হাওয়া’র যে প্রচারটা চলছিল, সেটা হাওয়াতেই চলছিল। স্রেফ হাওয়াবাজি। এমনকি সমীক্ষার পরেও দলকে চাঙ্গা রাখতে সেটা চালিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিজেপি নেতারাই এখন মানছেন সেটা। যে মনোজ তিওয়ারি ‘টুইট সেভ করে রাখুন’ বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন, তিনিই আজ বলছেন, ‘‘দলের প্রদেশ সভাপতি আমি। কী করে বলে দিই হারছি?’’
অথচ ঢক্কানিনাদ তো কম ছিল না। দিল্লির ‘দিল’-এ তখন বসে অরবিন্দ কেজরীবাল। ভোটের একমাস আগে। বিজেপি নেতারা বাঁকা হাসি নিয়ে বলতেন, ‘‘এখনও তো অমিত শাহ ইনিংস শুরু করেননি। ‘মাস্টারব্লাস্টার’ নরেন্দ্র মোদীও নামেননি।’’ ভাবটা এমন, এই জুটি নামলেই ওলট-পালট হয়ে যাবে সব অঙ্ক।
আরও পড়ুন: গণ-আদালতে খারিজ বিদ্বেষ, কঠোর কোর্টও
বিজেপি শিবিরে বিদ্রূপ হত, কেজরীবালের তো সব ‘অমুক-ফ্রি’, ‘তমুক-ফ্রি’। বিজেপি এ সব ‘ফ্রি’-র চক্করে পড়বে না। কিন্তু প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে বিজেপি বুঝল, এই ফ্রি-র মোহেই মজেছে দিল্লি। বিজেপির নীতি নয়, সেই পথে পাল্লা দেওয়া।
অতএব? আস্তিন থেকে বেরোল শাহিন বাগ। তাই নিয়েই প্রবল হাওয়া তুললেন অমিতরা। ছোট-বড়-মেজো সভা থেকে ঝড় উঠল বিজেপির। সব রাজ্য থেকে নেতাদের আনা হল দিল্লিতে। বাঙালি পাড়ায় বাঙালি নেতা, তামিল পাড়ায় তামিল। রীতিমতো কার্পেট বম্বিং। হাওয়া তোলা হল, ধুলোর মতো নাকি উড়ে যাবেন কেজরীবাল!
ছবিটা বদলে গেল ভোটের পরেই। বুথ-ফেরত সব সমীক্ষাই বলল, ঝড় আছে। তবে সেটা কেজরীবালেরই। বিজেপি নেতারাই একান্তে মানছেন, তার পরও কৌশল বদল হল। ফের তৈরি করা হল ‘হাওয়া’। যাতে ভোটগণনা পর্যন্ত চাঙ্গা থাকেন কর্মীরা। কী সেই হাওয়া? শেষ পর্যন্ত বলে যাওয়া— বিজেপিই জিতছে। দলের এক নেতা আজ বলেন, ‘‘হরিয়ানাতেও অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘অব কি বার, ৭৫ পার’। হয়েছে? হয়নি। মহারাষ্ট্রে ১৭৫ পার? হয়নি। দিল্লিতেও স্লোগান ছিল ৪৫ পার। এ বারেও হয়নি। কিন্তু একটা টার্গেট তো রাখতেই হয়। মিলুক না মিলুক।’’ তাই ভোট যখন শেষ, বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা বি এল সন্তোষ দাবি করলেন, শেষ ২ ঘণ্টায় ১৭ শতাংশ ভোট হয়েছে। বুথফেরত সমীক্ষায় সেটি ধরাই হয়নি। বিজেপির বাকি নেতারাও বলতে থাকলেন, সব সমীক্ষার হিসেব বেলা তিনটে পর্যন্ত। মনোজ তিওয়ারিও বললেন, ‘‘৪৮ আসন নিয়ে সরকার গড়ছি আমরা। আসল ভোট পড়েছে বেলা তিনটের পর।’’ বিজেপির এই আস্ফালন দেখে কিছুটা ঘাবড়েও গেলেন কেজরীর দলের নেতারা। অনেকেই বলাবলি শুরু করলেন, ইভিএমে কোনও কারচুপি হয়নি তো?
আরও পড়ুন: টানা তিন বার অরবিন্দ কেজরীবাল, ঝড় কংগ্রেসে
ভোটগণনার আগের দিন রাতে রাজ্যসভায় হুইপ জারি করল বিজেপি। বলা হল, গুরুত্বপূর্ণ বিল আসছে। দলের সব সাংসদই জানেন, হুইপ বাজেট পাশের জন্যই। তবু কেন লেখা হল ‘বিল’? তা হলে কি ভোটগনণার দিন নজর ঘোরাতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির বিল নিয়ে আসা হচ্ছে? শুধু বিরোধী দল নয়, বিজেপি সাংসদদের মনেও এই সংশয় এল। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর দফতরে ঘন ঘন ফোন গেল। কিসের বিল? অবশেষে আজ সকালে রাজ্যসভাতে বেঙ্কাইয়াকে বলতে হল, কোনও বিল আসছে না।
হাঁফ ছাড়লেন বিরোধীরা। ততক্ষণে সবাই বুঝে গিয়েছেন, এ সবই বিজেপির কৌশল। নকল হাওয়া তৈরি করা। সে কারণে আজ দুপুরে দিল্লির ফল স্পষ্ট হতেই আর কেউ পাত্তা দেননি বিজেপিকে। আপ যখন ৫০-এর বেশি আসন পাচ্ছে, মনোজ তিওয়ারি তখনও বলে চলেছেন, ‘‘সেদিন বেলা তিনটের পর পড়া ভোটের গণনা বাকি!’’ বিরোধী শিবিরের এক নেতা বললেন, ‘‘ওগুলো ৩০ ফেব্রুয়ারি গুনতে বলুন।’’