দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। —ফাইল চিত্র।
মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর! দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল সেখানকার মুখ্যসচিব নরেশ কুমারকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে এ বার চিঠি দিয়েছেন উপরাজ্যপাল ভি কে সাক্সেনাকে।
গত বৃহস্পতিবার দিল্লির মন্ত্রী অতিশীর নেতৃত্বাধীন ভিজ়িল্যান্স দফতরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উপরাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরী। ৬৭০ পাতার রিপোর্টে অভিযোগ তোলা হয়েছে, নিজের প্রভাব খাটিয়ে ছেলের সংস্থাকে কয়েকশো কোটি টাকার মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে। তাই মুখ্যসচিবকে অবিলম্বে সরিয়ে দেওয়া এবং তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তের সুপারিশ করা হয় দিল্লির ভিজ়িল্যান্স দফতরের ওই রিপোর্টে।
কিন্তু তার পরেও উপরাজ্যপাল কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির অভিযোগ। প্রসঙ্গত, মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগটি তোলা হয়েছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের একটি জমি কেনার সূত্রে। এ বিষয়ে দিল্লির ভিজ়িল্যান্স দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী অতিশীর কাছে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়েছিল কেজরীওয়ালের দফতর। সেই রিপোর্টই উপরাজ্যপালের পাশাপাশি, সিবিআই এবং ইডি-র কাছে পাঠানো হয়। সুপারিশ করা হয়, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নরেশ কুমারকে সাসপেন্ড করা হোক।
কেজরীর সরকারের দাবি, গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে এক আইনজীবী দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির বানমোলি গ্রামে ১৯ একরের একটি জমির দাম নির্ধারণ নিয়ে অভিযোগ জানান। দ্বারকা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য ২০১৮ সালে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ওই জমি কিনেছিলেন। জেলা প্রশাসন জমিটির দাম নির্ধারণ করেছিল ৪১.৫২ কোটি টাকা। জমির দুই মালিক সুভাষচন্দ কাঠুরিয়া এবং বিনোদকুমার কাঠুরিয়া সেই দামকে চ্যালেঞ্জ করেন।
সুভাষচন্দ হলেন আমন সারিন নামে এক ব্যবসায়ীর শ্বশুর। আমন সারিন অনন্ত রাজ লিমিটেড নামে একটি সংস্থার এমডি এবং সিইও। সারিনের এই সংস্থাতেই কৌশলগত উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন মুখ্যসচিবের ছেলে করণ চৌহান। জমিটির দামের সালিশির দায়িত্ব ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির জেলাশাসকের উপরে। ২০২২ সালের এপ্রিলে দিল্লির মুখ্যসচিব হন নরেশ। দু’মাস পরে জুন মাসে জেলাশাসকের পদে আসেন হেমন্ত কুমার। তিনি ওই জমির দাম বাড়িয়ে ৩৫৩.৭ কোটি করে দেন। ফলে সরকারকে জমিটির দাম বাবদ অনেক বেশি টাকা গুনতে হয় বলে হেমন্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করে দিল্লির ভিজ়িল্যান্স দফতর।
এ বার দিল্লি সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুখ্যসচিব, ম্যাজিস্ট্রেট এবং জমি মালিকদের মধ্যে যোগসাজশ ছিল, ঘটনাপ্রবাহ বিচার করে এমন সন্দেহ করার কারণ রয়েছে। মুখ্যসচিবের দাবি, তাঁর নামে বদনাম রটানো হচ্ছে। ছেলের সংস্থার ডিরেক্টরদের তিনি চেনেন না। সংশ্লিষ্ট আইএএস অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ তিনিই করেছিলেন। কিন্তু সরকারি রিপোর্টের বক্তব্য, মুখ্যসচিব এবং ভিজ়িল্যান্স দফতরের সিনিয়র কর্তাদের যোগসাজশে এই ‘বাড়তি মুনাফা’র অঙ্ক ৮৫০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৩১২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছিল।