অরবিন্দ কেজরীওয়াল। — ফাইল চিত্র।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে অন্তর্বর্তী জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট। ১ জুন, লোকসভা ভোটের শেষ দফা পর্যন্ত জেলের বাইরে থাকবেন তিনি। দিল্লির ‘আবগারি দুর্নীতিকাণ্ডে’ গত ২১ মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সেই থেকে তিহাড়ে বন্দি আপ প্রধান। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ২ জুন তাঁকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
কেজরীর অন্তর্বর্তী জামিনের খবর পেয়ে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘‘অরবিন্দ কেজরীওয়াল অন্তর্বর্তী জামিন পেয়েছেন দেখে আমি খুব খুশি। চলতি নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে এটা খুব সহায়ক হতে চলেছে।’’
চলতি লোকসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রচার করতে দেওয়ার জন্য জামিন চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দিয়েছিলেন কেজরীওয়াল। মঙ্গলবার হলফনামায় তার বিরোধিতা করেছে ইডি। তাদের বক্তব্য, আইন সকলের জন্য এক। নির্বাচনে প্রচার করতে পারা মৌলিক, সাংবিধানিক এমনকি আইনি কোনও অধিকারের মধ্যে পড়ে না। এই বিরোধিতা প্রসঙ্গে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘‘দুটো বিষয়কে সমান্তরাল করার চেষ্টা করব না। মার্চে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। এটা আগে বা পরে করা হতে পারত। আর ২১ দিন পরে সেটা হলেও কিছু যেত আসত না। ২ জুন কেজরীওয়াল আত্মসমর্পণ করবেন।’’ কেজরীর হয়ে মামলা লড়ছেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি আদালতে আবেদন করে জানিয়েছিলেন, আপ প্রধানের অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ কি কোনও ভাবে ৫ জুন পর্যন্ত করা যেতে পারে! বিচারপতি খন্না খারিজ করে দেন আবেদন। ইডির হয়ে সওয়াল করছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি জানান, জেল থেকে বেরিয়েও এই মামলায় মুখ খোলা উচিত নয় কেজরীর। নির্দিষ্ট দিনেই তাঁকে জেলে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
কেজরীর আইনজীবী শাদান ফারাসাত জানিয়েছেন, কেজরী যাতে শুক্রবারই তিহাড় জেল থেকে বার হতে পারেন, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘১ জুন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী জামিনের কথা মৌখিক ভাবে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্দেশ তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি। আপলোড হওয়ার পরেই জানতে পারব, জামিনের আর কোনও শর্ত রয়েছে কি না! শুক্রবারই যাতে কেজরীকে জেল থেকে বার করা যায়, সেই চেষ্টাই করব।’’ সূত্রের খবর, নিয়ম মেনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর কেজরীর আইনজীবী দায়রা আদালতে যাবেন। সেখানে তৈরি হবে মুক্তির নির্দেশ। সেই নির্দেশ পাঠানো হবে তিহাড় কর্তৃপক্ষকে। দায়রা আদালতের নির্দেশ পেলে তবেই জেল থেকে বার হতে পারবেন কেজরী।
মঙ্গলবার কেজরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, কেজরীওয়াল নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। অপরাধী নন। বলা হয়েছিল, নির্বাচনের বিশেষ সময় চলছে এখন। ইডি এর পাল্টা যুক্তি দিয়ে জানায়, গত পাঁচ বছরে দেশে ১২৩টি ভোট হয়েছে। প্রচারের জন্য জামিন দেওয়া হলে কোনও রাজনীতিককেই আর বিচার বিভাগীয় হেফাজতে ধরে রাখা যাবে না। তারা আরও জানায়, প্রচারের জন্য কেজরীকে ছাড়া হলে ভুল দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। তা ছাড়া কেজরীওয়াল যে লোকসভা ভোটের প্রার্থী নন, সেই বিষয়েও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।