ভোটের লম্বা লাইন শাহিন বাগে। ছবি: রয়টার্স।
নির্বাচন কমিশন আগেই এই এলাকাকে ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ ঘোষণা করেছিল। ফলে কোনও রকম খামতি রাখতে চায়নি প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন। চার দিকেই শুধু উর্দিধারী পুলিশ আর আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানরা টহল দিচ্ছেন। শনিবার নির্বাচনের দিন গোটা শাহিন বাগ যেন নিরাপত্তার একটা নিশ্চিদ্র দুর্গে পরিণত হয়েছিল। এক দিকে, আন্দোলনকারীরা, অন্য দিকে, ভোটাররা। মাঝে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার বেড়া তুলে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশ। এ দিন শাহিন বাগের মোটের উপর ছবিটা ছিল এ রকমই।
সকাল থেকেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। যে শাহিন বাগ নিয়ে সব দলেরই আশঙ্কা ছিল, এ দিন তার ঠিক উল্টো চিত্র সকলকে অবাক করে দিয়েছে। সকাল থেকেই শাহিন বাগ পাবলিক স্কুলে ভোটারদের লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে শাহিন বাগ গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে। সেই শাহিন বাগে ভোটারদের এমন উপস্থিতি কোন পথের ইঙ্গিত দিচ্ছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জোরদার রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আর পি মীনা বলেন, “আমরা সর্ব ক্ষণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলাম। পাশাপাশি, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সে দিকটাও নজর রাখা হচ্ছিল। শাহিন বাগের বুথগুলোকে নিরাপত্তার বেড়াজালে মুড়ে ফেলা হয়।”
ভোটের আগে থেকেই দিল্লির নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি-র নজরবিন্দু হয়ে উঠেছিল শাহিন বাগ। ওখলা বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে এটি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আধিক্য বেশি এই এলাকায়। দিল্লির জামিয়া মিলিয়া, জামা মসজিদের পাশাপাশি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে এখান থেকে। টানা ৫৫ দিন ধরে লাগাতার ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলকারীরা। নির্বাচনী প্রচারের প্রথম থেকেই শাহিন বাগকে নিশানা বানিয়েছে বিজেপি। নানা বিতর্কিত মন্তব্য, কটাক্ষ উড়ে এসেছে শাহিন বাগ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে। ভোটের ঠিক আগেই গুলি চলে শাহিন বাগে। তা নিয়ে জাতীয় রাজনীতি বেশ সরগরম হয়ে ওঠে। বিজেপি নেতাদের কেউ আন্দোলনকারীদের গুলি মারার, কেউ আবার ক্ষমতায় এলে এক ঘণ্টায় শাহিন বাগ ফাঁকা করে দেওয়ার হুমকিও দেন।
আরও পড়ুন: সিএএ: কবিকে পুলিশে ধরিয়ে পুরস্কৃত হলেন উবর চালক
আরও পড়ুন: মোহালিতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বহুতল, অনেকে আটকে থাকার আশঙ্কা
এক দিকে, অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি যখন দিল্লিতে তাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ নিয়ে প্রচার চালানো শুরু করে, ঠিক তখনই মেরুকরণের রাজনীতি শুরু করে তাঁর পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়ার কৌশল নেয় বিজেপি। শাহিন বাগ নিয়ে কেজরীবালকে লাগাতার আক্রমণ করেন বিজেপির নেতা-নেত্রীরা। শাহিন বাগকে ‘মিনি পাকিস্তান’-এর তকমাও দেয় বিজেপি নেতারা। শুধু তাই নয়, শাহিন বাগ নিয়ে কেন চুপ কেজরীবাল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভোটের হাওয়া নিজেদের দিকে টানার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে বিজেপি।
লাগাতার আক্রমণের মুখে পড়ে কেজরীবাল শেষমেশ শাহিন বাগ নিয়ে মুখ খোলেন। তার পরেও আক্রমণ থামেনি বিজেপির। শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলে কেজরীবালকে কার্যত তুলোধনা করে বিজেপি। নরেন্দ্র মোদী থেকে অমিত শাহ— সকলেই শাহিন বাগ সম্পর্কে দিল্লি সরকারের ভূমিকা নিয়ে সুর চরমে তোলেন। ভোটের দিনও শাহিন বাগ ছিল বিজেপির নিশানায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ যেমন বলেন, দিল্লিকে ইসলামিক অঞ্চল হওয়ার থেকে বাঁচাতে বিজেপিকে ভোট দিন। আবার প্রবেশ বর্মা বলেন, “শাহিন বাগের ভোটাররা আম আদমি পার্টির কাছে ঋণী। কারণ আপ বিনামূল্যে বিরিয়ানি বিলিয়েছেন ওঁদের।”
শাহিন বাগের ভোটারের উপস্থিতি কি বদলে দেবে রাজধানীর রাজনৈতিক চিত্র, তা নিয়েই জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।