চালকের ভুল না ব্রেক ফেল, শুরু তদন্ত

কেবিনম্যান নিয়ম মেনেই ট্রেনটিকে স্টেশনে ঢোকাতে লুপ লাইন ব্যবহার করেছিলেন। ট্রেনটি থামবে বলে বছরাবাঁ স্টেশনের স্টার্টার সিগন্যাল লাল করাও ছিল। তা সত্ত্বেও চালক দ্রুত গতিতে লুপ লাইন দিয়ে এগিয়ে যান প্ল্যাটফর্মে না- থেমে। কিছু দূর এগোতেই লাইন শেষ হয়ে যাওয়ায় ঘটে বিপত্তি। দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন-সহ চারটি কামরা একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। তাতেই হতাহত হয়েছেন বহু যাত্রী।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪২
Share:

কেবিনম্যান নিয়ম মেনেই ট্রেনটিকে স্টেশনে ঢোকাতে লুপ লাইন ব্যবহার করেছিলেন। ট্রেনটি থামবে বলে বছরাবাঁ স্টেশনের স্টার্টার সিগন্যাল লাল করাও ছিল। তা সত্ত্বেও চালক দ্রুত গতিতে লুপ লাইন দিয়ে এগিয়ে যান প্ল্যাটফর্মে না- থেমে। কিছু দূর এগোতেই লাইন শেষ হয়ে যাওয়ায় ঘটে বিপত্তি। দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন-সহ চারটি কামরা একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। তাতেই হতাহত হয়েছেন বহু যাত্রী।

Advertisement

কিন্তু কেন এই বিপত্তি ঘটল?

একটি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে যাতে অন্য ‘থ্রু’ ট্রেন পিছনে আটকে না যায়, সে জন্যই তৈরি করা হয় লুপ লাইন। সাধারনত মেন লাইন থেকে বার করে লুপ লাইনটিকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয় স্টেশন ছাড়িয়ে কিছু দূর পর্যন্ত। তার পরে ফের সেটিকে মেন লাইনের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয়। ওই মেশানোর কাজটি কেবিনম্যান করেন পয়েন্টের সাহায্য। রেলের নিয়ম হল, স্টার্টার সিগন্যাল লাল থাকলে লুপ লাইন মেন লাইনের সঙ্গে মেশে না। সে ক্ষেত্রে সিগন্যাল না মেনে ট্রেন এগোলেও যাতে মেন লাইনে ঢুকে কোনও দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে, সে জন্যই ওই ব্যবস্থা।

Advertisement

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ লখনউ-বারাণসী শাখায় আরও ট্রেন ছিল। তাই বছরাবাঁ স্টেশনের মেন লাইনটি খালি রাখার জন্য দেহরাদূন-বারাণসী জনতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে লুপ লাইনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেবিনম্যান। রেল কর্তাদের দাবি, যা রেলের নিয়ম অনুযায়ী একদম সঠিক ছিল। স্টেশনে ট্রেনটি থামবে বলে স্টার্টার সিগন্যালও ছিল লাল। ফলে লুপ লাইনও মেন লাইনের সঙ্গে মেশানো ছিল না।

রেল কর্তারা জানান, লুপ লাইনে এ দিন চালক ঢুকেছিলেন অনেক বেশি গতি নিয়ে, যা করা উচিত ছিল না। প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল কর্তারা মনে করছেন, ট্রেনটি স্টেশনে না-থেমে কিছুটা এগিয়ে আর লাইন না পেয়ে সোজা মাটি দিয়ে তৈরি করা ঢিবিতে উঠে থেমে যায়। কিন্তু গতি বেশি থাকায় কামরাগুলি একে অন্যের ঘাড়ে ধাক্কা মারে। তাতেই প্রথম চারটি কামরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

তবে রেল কর্তাদের দাবি, রাজধানীর মতো এই ট্রেনটির কামরাগুলি এলএইচবি (লিঙ্ক হফম্যান বুশ) কামরা হলে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটা হতো না। কারণ, এলএইচবি কামরাগুলি ‘অ্যান্টি টেলিস্কোপিক’ বলে একে অন্যের মধ্যে ঢুকে যায় না, দুমড়েও যায় না। যেটা এই দুর্ঘটনায় ঘটেছে। রেল কর্তাদের বক্তব্য, গোটা দেশে যত ট্রেন চালানো হয়, এক সঙ্গে রাতারাতি সবগুলির কামরা পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়। পুরনো কামরার বদলে আস্তে আস্তে এলএইচবি কামরা আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

কিন্তু স্টেশনে থামতে হবে জেনেও চালক কেন এত জোরে লুপ লাইনে ঢুকে পড়লেন, আর কেনই বা স্টার্টার সিগন্যাল লাল দেখেও থামলেন না, এই সব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রেল কর্তাদের মুখে। ট্রেনটির চালকও এই দুর্ঘটনায় আহত। সবাই তাঁর বক্তব্যের অপেক্ষায়।

তবে রেল কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, সাধারণত পোড় খাওয়া কোনও চালক ট্রেন চালাতে চালাতে মনঃসংযোগ হারান না। ফলে কী ঘটেছিল এ দিন, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।

তাই এ দিনের দুর্ঘটনা চালকের ত্রুটিতে না ট্রেনের ব্রেকের ত্রুটিতে হয়েছে, সেটাই এখন দেখার। রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, অন্তর্ঘাতের বিষয়টিও তদন্তের আওতায় থাকছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement