অরুণাচলের ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে গড়ে ওঠা চিনের সেই গ্রামের উপগ্রহ ছবি। ফাইল চিত্র।
চিন নিয়ে ঘরে বাইরে সঙ্কটে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, অরুণাচল প্রদেশে সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে চিনের গ্রাম তৈরি নিয়ে পেন্টাগনের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরে যথেষ্ট দিশেহারা দেখাচ্ছে কেন্দ্রকে। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে একই দিনে সম্পূর্ণ দু’রকম বিবৃতি দিয়েছে বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সরকারের এই ‘দ্বিচারিতা’ নিয়ে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন রাহুল গাঁধী-সহ কংগ্রেস নেতৃত্ব। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় গত দেড় বছর যখন ড্রাগনের লাল চোখ রীতি মতো কোণঠাসা করে রেখেছে ভারতকে, তখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও এই চাপ সার্বিক ভাবে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে মোদী সরকারের।
লাদাখের পরে অরুণাচল নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই হিমাচল প্রদেশের কিন্নর, লাহুল, স্পিতিতেও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর চিনের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে বলে রিপোর্ট দিল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, দুই জেলার ২৪০ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে চিন। ওই অঞ্চলে বিপুল সৈন্য সমাবেশ করার পাশাপাশি নজরদারিও বাড়িয়েছে তারা।
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগেই চিন-পাকিস্তান, জাতীয়তাবাদ এবং সীমান্ত নিয়ে নানা রকম হুঙ্কার দেওয়ার কৌশল নেন মোদী। তা সে লোকসভা ভোট হোক বা গুজরাতের বিধানসভা নির্বাচন। উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেও সেই অঙ্কেই ‘তালিবান’ অস্ত্রের ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিন্তু ভোটের মুখে আমেরিকার অরুণাচল সংক্রান্ত রিপোর্ট এবং তাকে ঘিরে সরকারের ঘোল খাওয়ার বিষয়টি মোদী তথা বিজেপি সরকারের সেই ‘বিক্রমে’ জল ঢালছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মোদী সরকারের এমন মনোভাবকে আক্রমণে করে আসরে নেমেছে কংগ্রেস। ঘটনা হল, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী কার্যত স্বীকার করে নেন, অরুণাচলের সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে চিনের গ্রাম গড়ার সত্যতা। একধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, “অতীতেও বহু বছর ধরে সীমান্ত সংলগ্ন অঞ্চলে চিন নির্মাণ কাজ চালিয়ে গিয়েছে। তারা বেআইনি ভাবে দশকের পর দশক এলাকা (ভারতের) দখল করে রেখেছে। ভারত কখনওই নিজেদের ভূখণ্ডে এই বেআইনি দখলদারি মেনে নেয়নি, অথবা কখনই চিনের অযৌক্তিক দাবিকে মান্যতা দেয়নি।” ওই একই দিনে ‘চিফ অব ডিফেম্স স্টাফ’ বিপিন রাওয়ত আমেরিকার রিপোর্টটিই ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘চিন আমাদের এলাকায় ঢুকে পড়ে নতুন গ্রাম বানিয়েছে — এমন কিছুই সত্যি নয়।’
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র শুধু মাত্র যে রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করেছেন, তাই-ই নয়। আরও এক ধাপ এগিয়ে এটাও বলে বসেছেন যে, ভারতের জমি বেআইনি ভাবে দখল করে রেখেছে চিন। যা প্রধানমন্ত্রীর ‘শক্তিশালী’ ভাবমূর্তির পক্ষে মারাত্মক। আজ বিপিন রাওয়তের বক্তব্য সংক্রান্ত মিডিয়া রিপোর্টটি পোস্ট করে রাহুল গাঁধী লিখেছেন, “আমাদের জাতীয় সুরক্ষার সঙ্গে এমন ভাবে সমঝোতা করা হয়েছে, যার কোনও ক্ষমা নেই। কারণ ভারত সরকারের কোনও রণকৌশলই নেই। আর আমাদের ছাপান্ন ইঞ্চি মহোদয় ভীত। যখন ভারত সরকার মিথ্যা বলেই চলেছে, তখন আমাদের বীর সেনারা তাঁদের জীবন বিপন্ন করে সীমান্ত প্রহরা দিয়ে চলেছেন। আমার হৃদয় তাঁদের সঙ্গে রয়েছে।” পাশাপাশি কংগ্রেসের রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, “মোদী সরকার অবশেষে অরুণাচলে চিনা গ্রাম নিয়ে মুখ খুলল। জানাল, ‘আমরা বেআইনি চিনা দখলদারি মানি না।’ মোদীজি, আপনি কি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন নাকি শুধু মাত্র মানি না বলেই ছেড়ে দেবেন? সীমান্তে যে বাড়িগুলি বানানো হচ্ছে, সেগুলি কি প্রধানমন্ত্রী-চিনা আবাস যোজনার অন্তর্গত?’ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার টুইট, “বিদেশ মন্ত্রক বলছে চিনের বেআইনি দখলদারি তারা মানে না। এ দিকে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ চিনকে ছাড়পত্র দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছেন, আমাদের ভূখণ্ডে কেউ ঢুকতে পারেনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক চিনের সঙ্গে ডেপসাং-গোগরা নিয়ে ১৩ রাউন্ড আলোচনা সেরেছে। এ বার কি মোদী সরকার প্রকৃত সত্যিটা জানাবে?”