নদীপথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীর দেহ

সৌদি আরব থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় করিমগঞ্জের ভুয়ো পাসপোর্ট চক্র। ওই চক্রের মাথা কামালউদ্দিন। থাকে আরবেই। করিমগঞ্জে তার হয়ে কাজ করে শাজাহান। চার জন বাংলাদেশিকে জেরা করে এমনই জেনেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪০
Share:

বাংলাদেশে ফিরছে আব্দুল আহাদের মৃতদেহ। শুক্রবার করিমগঞ্জ সীমান্তে ছবিটি তুলেছেন শীর্ষেন্দু সী।

সৌদি আরব থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় করিমগঞ্জের ভুয়ো পাসপোর্ট চক্র। ওই চক্রের মাথা কামালউদ্দিন। থাকে আরবেই। করিমগঞ্জে তার হয়ে কাজ করে শাজাহান। চার জন বাংলাদেশিকে জেরা করে এমনই জেনেছে পুলিশ। পাশাপাশি, সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে আসার পর আচমকা অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হওয়া বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী আব্দুল আহাদের দেহ আজ সে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। জকিগঞ্জে নদী-সীমান্ত দিয়ে ওই দেহ বাংলাদেশে পাঠানো হয়। ধৃত বাংলাদেশিদের সঙ্গে এ দেশে ঢুকেছিল আহাদও।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শাজাহানের কালীগঞ্জের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সৌদি আরব থেকে মুম্বই আসার বিমানের টিকিট মিলেছে। আজ সাংবাদিক বৈঠকে পুলিশ সুপার প্রদীপরঞ্জন কর জানান, সৌদি আরবের কামালউদ্দিনের কাছে থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বেতন পেত শাজাহান। সে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষদের এ দেশে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে দেওয়ার ব্যবস্থা করত। সম্প্রতি মেঘালয়ের সীমান্ত দিয়ে পাঁচ জন বাংলাদেশি করিমগঞ্জে আসে। তাদের কালাইন থেকে নিয়ে এসেছিল শাজাহানই। পুলিশ সুপার জানান, ওই বাংলাদেশিদের কাছে ভারতীয় ভোটার পরিচয়পত্র রয়েছে। ধৃতদের সঙ্গী আফতাবউদ্দিনের কাছে রয়েছে এ দেশের পাসপোর্ট। তাতে তাকে করিমগঞ্জ জেলার কাদাইরগুল গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে জানানো হয়েছে। পুলিশ জেনেছে, আফতাবউদ্দিনের পাসপোর্টটি ডাকে কাদাইরগুলে পৌঁছেছিল। নিজেকে আফতাবের ভাই পরিচয় দিয়ে বিলালউদ্দিন খান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি ওই পাসপোর্ট নিয়েছিল। এ কথা পুলিশকে জানিয়েছেন ওই গ্রামের পোস্টমাস্টার। পুলিশ সুপারের আশঙ্কা, করিমগঞ্জের বাসিন্দাদের কয়েক জন বাংলাদেশিদের মদত দিচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের নিজেদের পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। তদন্তে সেই প্রমাণও মিলেছে। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশকে সে সব ভুয়ো তথ্য জানানো হচ্ছে। সে দিকে তাকিয়ে ওই প্রক্রিয়ার নিয়মনীতি আরও কঠোর করতে চাইছেন পুলিশকর্তা। পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের সময় জমির দলিল, সার্টিফিকেট বন্ড হিসেবে রাখা হবে। পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ থেকে আসা ৪ জনের মধ্যে দু’জনের কাছে সে দেশের পাসপোর্ট রয়েছে। অনুপ্রবেশকারী সুমন আহমেদ, সাব্বির আহমেদ, বিলাল হুসেন, শাহিদ আহমেদকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন অসম পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এসপি।

বাংলাদেশ থেকে করিমগঞ্জে প্রবেশ করা আব্দুল আহাদের মৃতদেহ আজ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দিল ভারত। করিমগঞ্জের বালিয়া থেকে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহের পরিচয় জানার পরই করিমগঞ্জ পুলিশ বিএসএফের সহায়তায় বাংলাদেশের কাছে খবর পাঠায়। আহাদের বাড়ি যে বাংলাদেশের জকিগঞ্জে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে দেয় পুলিশ। তারপর বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি) জকিগঞ্জে থাকা আহাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অবশেষে আজ মৃতদেহটি হস্তান্তর হয়।

Advertisement

দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ বাংলাদেশের একটি নৌকায় করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কুশিয়ারা নদীর ওপারে। সেখানে মৃতের পরিবারের লোকেরা ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আব্দুল আহাদ তাঁর চার সঙ্গীকে নিয়ে মেঘালয়ের উমকিয়াং সীমান্ত দিয়ে করিমগঞ্জে আসেন ১৪ অগস্ট। বেশ কিছুদিন কালীগঞ্জের গোপন আস্থানায় থাকার পর তার শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। ২৩ অগস্ট তাঁর মৃত্যুর পর সঙ্গীরা এবং কালীগঞ্জ এলাকার শাজাহান আহমদ দেহটি বালিয়ার নির্জন এলাকায় ফেলে দেয়। দিনের বেলায় মৃতদেহটি যখন তারা রাস্তার পাশে ফেলছিল তখন তা দেখে ফেলেন গ্রামেরই এক মহিলা। পরে নিলামবাজার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এবং নিলামবাজার এলাকা থেকেই ওই চার বাংলাদেশি-সহ একজন ভারতীয়কেও গ্রেফতার করে। পুলিশ জানতে পারে ভারত থেকে পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে তাদের ইউরোপে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement