শুক্রবার ওড়িশার উপকূলে ঘণ্টায় প্রায় ২১০ কিলোমিটার গতিতে ফণী আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার পর ফণীর অভিমুখ হবে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। এ রাজ্যে যখন ফণী ‘ছোবল’ মারবে, তখন তার গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি।
এর আগেও বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছে দেশ। ২০০৯ সালে মে মাসের তীব্র গরমে ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় আয়লা। নদীবাঁধ ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছিল সুন্দরবন-সহ বাংলাদেশের একাংশের জনজীবন।
২০১৮-এর অক্টোবরে ঘূর্ণিঝড় তিতলি ওড়িশার গোপালপুর, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে আছড়ে পড়ে। ১৪৫ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে তিতলির দাপটে প্রাণ হারান অনেকে।
দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর ঘনীভূত হয় ঘূর্ণিঝড় অক্ষি। তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী উপকূলে, পরে গুজরাতে আছড়ে পড়ে এটি। ২৪০০ কিলোমিটার পেরিয়ে ৪০ বছর পর কোনও ‘সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম’ এত দূর পাড়ি দিয়েছিল। মারা যান ৩৬৫ জন।
২০১৬ সালে তামিলনাড়ুর উপকূল ঘেঁষে স্থলভূমিতে ১৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় আছড়ে পড়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ভারদা’। প্রাণ হারান ২২ জন। ২২ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয় রাজ্যের। তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকা বাদে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একাংশ বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
২০১৪ সালে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নেপাল ও পূর্ব ভারতের একাংশ। হুদহুদ আছড়ে পড়ে উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশাতেও। ১২৪ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন সে বার।
২০১৩ সালের অক্টোবরে পিলিন ঘূর্ণিঝড়ে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, আন্দামান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩০ জন প্রাণ হারান। পাঁচ লক্ষ ৫৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটা ছিল ২৩ বছরের ইতিহাসে ‘বিগেস্ট ইভ্যাকুয়েশন’। ক্যাটেগরি ৫ হারিকেনের সমান বলা হয়েছিল একে।
২০১১ সালে ঘূর্ণিঝড় থানের দাপটে ৩৩ জন মানুষ প্রাণ হারান। মূলত অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুতে শক্তিশালী ক্রান্তীয় এই ঘূর্ণিঝড় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল।
২০১০ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ চেন্নাইয়ের অদূরে মহাবলিপুরমের কাছে ধেয়ে আসে। সতর্কবার্তা ছিল ১১০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়ে 'নিলম'। ঝড় এল ঠিকই। বেগ কমে যায় মাত্র ৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। মারা যান ৭৫ জন। ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয় অন্ধ্র ও তামিলনাড়ুর।
১৯৯৯-এর অক্টোবর মাসেই ধেয়ে আসা ওই বিধ্বংসী সামুদ্রিক ঝড়ে গঞ্জাম, পুরী-সহ উপকূল ওড়িশা কার্যত ধুয়েমুছে গিয়েছিল। সেই সুপার সাইক্লোনের দাপটে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত দশ হাজার মানুষের।
১৯৭৭ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের ঘূর্ণিঝড়, ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূ্র্ণিঝড়ের প্রভাবও ছিল মারাত্মক। ঝড়ের পর মহামারীতে প্রাণ হারিয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ।