National News

ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে ফেরার মরিয়া চেষ্টায় দাউদ!

আড়াই দশক ধরে ভারতের নাগাল এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যিনি, তিনি এ বার ভারতের সাহায্য চাইছেন! আচমকা! করাচিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া আস্তানা ছেড়ে এ বার ভারতে ফিরতে চাইছেন দাউদ ইব্রাহিম!

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ১৭:০৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

আড়াই দশক ধরে ভারতের নাগাল এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন যিনি, তিনি এ বার ভারতের সাহায্য চাইছেন! আচমকা! করাচিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া আস্তানা ছেড়ে এ বার ভারতে ফিরতে চাইছেন দাউদ ইব্রাহিম!

Advertisement

অত্যন্ত আশ্চর্যজনক হলেও, দাউদ ইব্রাহিমের ভারতে ফেরার চেষ্টা নিয়ে জোর জল্পনা যে শুরু হয়েছে, সে খবর সত্যি। দক্ষিণ ভারতের একটি ইংরেজি পত্রিকা এই খবর প্রকাশ্যে এনেছে। ১৯৯৩ সালের মুম্বই বিস্ফোরণের মূল পাণ্ডা তথা ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিম ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরে আসতে চান বলে ওই ইংরেজি সংবাদপত্রে লেখা হয়েছে। দাউদ নাকি এখন পাকিস্তানে তাঁর প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন।

ভারতে দাউদ ইব্রাহিম গণহত্যা, সন্ত্রাসবাদ, ষড়যন্ত্র, তোলাবাজি-সহ গুচ্ছ গুচ্ছ মামলার আসামি। ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের পর থেকেই এই আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনকে হাতে পেতে চাইছে ভারত সরকার। কিন্তু দাউদ কখনও আরব আমিরশাহিতে, কখনও পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়ে ভারতের নাগালের বাইরে থেকেছেন প্রায় ২৩ বছর ধরে। আমিরশাহির সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করায় বিপদসঙ্কেত পেয়ে যান এই আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন। তিনি পাকাপাকি ভাবে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। পাকিস্তানের সেনা এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ব্যবস্থাপনায় বন্দর শহর করাচির ক্লিফটন এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া বাংলোয় থাকতে শুরু করেন দাউদ, দাবি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। পরে তাঁকে করাচির এরিয়া-৫ ডিফেন্স হাউজিং অঞ্চলের একটি বাংলোয় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও খবর। কিন্তু, পাকিস্তান সে খবরের সত্যতা কোনও দিনই স্বীকার করেনি। রাষ্ট্রপুঞ্জ দাউদ ইব্রাহিমের গায়ে ‘নিষিদ্ধ’ তকমা লাগিয়ে দেওয়ার পর, তাঁর সে দেশে থাকার খবর স্বীকার করে নেওয়া পাকিস্তানের পক্ষে আরও মুশকিল হয়ে উঠেছে। কিন্তু দাউদ ইব্রাহিম নাকি এ বার পাক কর্তৃপক্ষের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যদি তাঁর মৃত্যু পাকিস্তানেই হয়, তা হলে তাঁর দেহ যেন ভারতে পাঠানো হয়। দাউদ ইব্রাহিমের এই শেষ ইচ্ছার খবর যদি সত্যি হয় এবং পাকিস্তান যদি সে ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করে, তা হলে কিন্তু দাউদকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আর কিছুতেই পাকিস্তান অস্বীকার করতে পারবে না।

Advertisement

এই বাংলোতেই নাকি এখন থাকছেন দাউদ ইব্রাহিম।

কিন্তু, কেন ভারতে ফিরতে চাইছেন দাউদ?

পাকিস্তানে নিজের প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন দাউদ। দক্ষিণ ভারত থেকে প্রকাশিত ইংরেজি পত্রিকাটি গত বছরের শেষ দিকেই দাউদের এই আশঙ্কার খবর প্রকাশ করেছিল। পাক সেনা এবং আইএসআই নাকি এখন দাউদের দায় কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। ঝেড়ে ফেলার অন্যতম উপায় হল তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া। কিন্তু জীবন্ত দাউদকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হলে, পাকিস্তানের অনেক কুকীর্তি সামনে চলে আসবে। তাই দাউদের মৃত্যুই নাকি এখন সবচেয়ে বেশি কাম্য পাকিস্তানের কাছে।

১৯৯৩-এর ওই বিস্ফোরণের পাণ্ডা দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ বলে খবর। করাচির বাংলোতেই তাঁর চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হয়। কিন্তু, চিকিৎসার আয়োজনে নাকি সম্প্রতি টান পড়তে শুরু করেছে। যে ধরনের অসুস্থতা দাউদের রয়েছে বলে খবর, তাতে চিকিৎসা ঠিক মতো না হলে বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে পারে। পাকিস্তানের সেনা এবং আইএসআই এখন সে রকম কিছু ঘটাতেই চাইছে বলে দাউদ ইব্রাহিম নাকি আশঙ্কা করছেন। সেই কারণেই নাকি তিনি নিজের নেটওয়ার্ক কাজে লাগিয়ে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ভারতে ফিরতে চাইছেন। সেই আয়োজন দাউদ অবশ্যই পাক কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়েই করার চেষ্টা করবেন। কিন্তু, বিষয়টি নাকি এখন পাকিস্তানেও গোপন নেই।

দাউদকে কেন ঝেড়ে ফেলতে চায় পাকিস্তান?

এই আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন এখন আর পাকিস্তানের কোনও কাজেই লাগছেন না। ভারতে ক্রমাগত নাশকতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে নেটওয়ার্ট দরকার, তার অনেকটাই এখন হারিয়েছেন মুম্বই থেকে পলাতক দাউদ। সন্ত্রাসবাদীরা আগে দাউদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ পেত বলেও খবর। কিন্তু ভারতের চাপে আরব আমিরশাহি এখন দাউদের বিভিন্ন বেনামী সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে শুরু করেছে। গত সাত মাসে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেনামী সম্পত্তি দাউদ ইব্রাহিমের হাতছাড়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এতে পাকিস্তানের সেনাকর্তারা আমিরশাহিরর উপর মোটেই খুশি হননি। একই সঙ্গে, দাউদের প্রতিও তাঁরা নাকি অনেকটাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

পাকিস্তানের কাছে তাঁর প্রয়োজন যে ফুরিয়েছে, দাউদও তা ভালই বুঝতে পারছেন। সেই কারণেই নাকি ভারতে ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি। তবে ভাবা যতটা সহজ, দাউদ ইব্রাহিমের পক্ষে ভারতে ফেরা এখন আর মোটেই ততটা সহজ নয়।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে পুড়ছে একের পর এক স্কুল, উদ্বিগ্ন কেন্দ্রও

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement