National News

কোরেগাঁও যুদ্ধ দলিতের কাছে গর্বের বিষয় হয়ে উঠল কী ভাবে

২০০ বছর আগের একটা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে হঠাৎ এমন আগুন কেন মহারাষ্ট্রে? কেন ওই যুদ্ধকে নিজেদের গর্বের কারণ বলে মনে করেন দলিতরা? কেনই বা ভিমা কোরেগাঁও যুদ্ধের দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপনের বিরোধিতায় খড়্গহস্ত কট্টরবাদী মরাঠি সংগঠনগুলি?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:৫৬
Share:

ব্রিটিশের জয় নয়, কোরেগাঁও যুদ্ধকে দলিতের জয় হিসেবে দেখেন অনেকে। —প্রতীকী ছবি / আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

একটা যুদ্ধের দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন। সেই উপলক্ষে বড়সড় জমায়েতের আয়োজন। আর তা নিয়েই আচমকা উত্তাল গোটা মহারাষ্ট্র।

Advertisement

১৮১৮ সালে পুণের কাছে ভিমা কোরেগাঁও এলাকায় ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়েছিল মরাঠা সেনা। ইতিহাস প্রসিদ্ধ সেই যুদ্ধকে দলিত সমাজ নিজেদের গর্বের আখ্যান হিসেবে তুলে ধরে। তাই ভিমা কোরেগাঁও যুদ্ধের ২০০ বছর উদযাপনের জন্য ১ জানুয়ারি বিশেষ জমায়েত হয়েছিল যুদ্ধ স্মারক চত্বরে। দলিতরা বড় সংখ্যায় যোগদানের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু শিবরাজ প্রতিষ্ঠান এবং হিন্দু একতা আগাঢ়ির মতো কিছু কট্টরবাদী সংগঠন হামলা চালাল দলিতদের উপরে। মৃত্যু হল এক দলিত যুবকের। সংঘর্ষে, হিংসায়, অশান্তিতে উত্তাল হয়ে উঠল মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা

২০০ বছর আগের একটা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে হঠাৎ এমন আগুন কেন মহারাষ্ট্রে? কেন ওই যুদ্ধকে নিজেদের গর্বের কারণ বলে মনে করেন দলিতরা? কেনই বা ভিমা কোরেগাঁও যুদ্ধের দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপনের বিরোধিতায় খড়্গহস্ত কট্টরবাদী মরাঠি সংগঠনগুলি?

Advertisement

মরাঠা সাম্রাজ্যের তৎকালীন অধীশ্বর পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-এর বাহিনী ১৮১৮-র যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের মুখ দেখেছিল। ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে মরাঠা সেনার সেই পরাজয় মরাঠি অস্মিতায় বড়সড় আঘাত। তাই ভিমা কোরেগাঁও যুদ্ধের দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন মেনে নিতে পারেনি কট্টরবাদী মরাঠি সংগঠনগুলি।

ওই যুদ্ধকে ঘিরে দলিত গরিমার কারণটা জানতে হলে অবশ্য ইতিহাসের আর একটু গভীরে যেতে হবে। ১৮০০ সালে রাজধানী পুণে হাতছাড়া হয়েছিল দ্বিতীয় বাজিরাওয়ের। ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়ে তিনি পুণে ছেড়ে সাতারায় আশ্রয় নেন। ১৮১৮ সাল নাগাদ দ্বিতীয় বাজিরাও পুণে পুনর্দখলের চেষ্টা করেন। ২৮ হাজার সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে সাতারা থেকে পুণের দিকে এগোতে শুরু করেন তিনি। কোরেগাঁওয়ের কাছে ব্রিটিশ বাহিনীর একটি ছোট অংশ মরাঠা বাহিনীর সামনে পড়ে যায়। ৮০০ জনের ওই ছোট বাহিনীটি মূল বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য পুণের দিকেই যাচ্ছিল। কিন্তু পথে বিরাট মরাঠা বাহিনীর সামনে পড়ে যাওয়ায় কোরেগাঁও গ্রামের ভিতরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সেনা। পেশোয়া বাজিরাও ২০০০ সৈন্যের একটি বাহিনীকে ওই গ্রামের চারপাশে মোতায়েন করে এগিয়ে যান। ৮০০ জনের ব্রিটিশ বাহিনীকে পর্যুদস্ত করার এবং কোরেগাঁওয়ের দখল নেওয়ার নির্দেশ ছিল ওই দু’হাজারি বাহিনীর উপরে। ১ জানুয়ারি, ১৮১৮ ভয়াবহ যুদ্ধ হয় কোরেগাঁওকে ঘিরে। কিন্তু মাত্র ৮০০ জনের বাহিনী রুখে দেয় পেশোয়ার দু’হাজারি বাহিনীকে। ব্রিটিশ বাহিনীর ২০০-৩০০ জন সদস্য প্রাণ হারান সে যুদ্ধে। কিন্তু পেশোয়ার বাহিনীর ৫০০-৬০০ জন সদস্যের মৃত্যু হয় শোনা যায়। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরে কোরেগাঁওতে ঢোকার চেষ্টা ছেড়ে দেয় মরাঠি বাহিনী। পুণে থেকে ব্রিটিশ সেনার বড়সড় বাহিনী এসে হাজির হলে পরিস্থিতি যে আরও খারাপ হতে পারে, তা আঁচ করে মরাঠি বাহিনী পিছু হঠতেও শুরু করে।

আরও পড়ুন: মুসলিমদের জন্যই দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, দাবি বিজেপি বিধায়কের

ব্রিটিশদের হয়ে কোরেগাঁওতে মরাঠি সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা মূলত মহার দলিত সম্প্রদায়ের ছিলেন। সেই জন্য দলিতদের একাংশ ওই যুদ্ধকে ব্রিটিশ বনাম ভারতীয়দের যুদ্ধ হিসেবে দেখেন না। দেখেন ‘উচ্চবর্ণীয়’ মরাঠি বনাম ‘নিন্মবর্ণীয়’ দলিতের যুদ্ধ হিসেবেই। তাই ব্রিটিশের জয়কে দলিতদের অনেকে নিজেদের জয় হিসেবেই দেখেন।

আরও পড়ুন: পাক জেলে বন্দি ৪৫৭ ভারতীয়, জানাল ইসলামাবাদ

১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি বি আর অম্বেডকর ভিমা কোরেগাঁওয়ের যুদ্ধ স্মারক সফরে যান, যিনি নিজেও ছিলেন মহার দলিতই। সেই থেকে ভিমা কোরেগাঁও আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে দলিতদের জন্য। প্রতি বছর ১ জানুয়ারি দলিতরা তীর্থযাত্রীর মতো ভিড় জমান ভিমা কোরেগাঁওতে। দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে এ বার সেই আয়োজন আরও বড়সড় ছিল। ফলে কট্টরবাদী মরাঠিদের তরফ থেকে বিরোধিতাও ছিল আরও জোরদার। সেই সঙ্ঘাতই এত বড় অশান্তির মুখে ঠেলে দিল মহারাষ্ট্রকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement