পেশোয়াই প্রতিপক্ষ, একজোট দলিতেরা

ঠাসা জনতার মধ্যে সভা শুরু হতেই দু’ঘণ্টা দেরি হয়। প্রথমেই বলতে ওঠেন রোহিত ভেমুলার মা রাধিকা। যে রোহিত ভেমুলাকে বিজেপি নেতৃত্বের চাপে সাসপেন্ড করা হয়েছিল হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৯
Share:

রাধিকা ভেমুলার সঙ্গে নিজের এই ছবি টুইটারে দিয়েছেন জিগ্নেশ।

দুশো বছর আগে পেশোয়াদের পরাজিত করেছিল দলিতেরা। আজকের ‘পেশোয়া’ বিজেপি-আরএসএসকে পরাস্ত করতে আজ একজোট হলেন দলিত নেতারা।

Advertisement

১৮১৮ সালে ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের ভীমা কোরেগাঁওয়ে পেশোয়াদের বিরুদ্ধে দলিতদের যুদ্ধে নামিয়েছিল ব্রিটিশরা। ব্রাহ্মণ পেশোয়াদের জাতপাত, ছোঁয়াছুঁয়ির বিরুদ্ধে লড়ে তাদের হারিয়ে দিয়েছিল দলিতরা। তারই দুশো বছর পর আজ সেই শনিওয়ারওয়াড়াতে এক মঞ্চে এলেন রোহিত ভেমুলার মা রাধিকা, গুজরাতের দলিত নেতা জিগ্নেশ মেবাণী, জেএনইউ-এর ছাত্রনেতা উমর খালিদ, ছত্তীসগঢ়ের আদিবাসী নেত্রী সোনি সোরি, ভীম আর্মির বিনয় রতন সিংহেরা। যে শনিওয়ারওয়াড়াতে সদর দফতর ছিল পেশোয়াদের।

ঠাসা জনতার মধ্যে সভা শুরু হতেই দু’ঘণ্টা দেরি হয়। প্রথমেই বলতে ওঠেন রোহিত ভেমুলার মা রাধিকা। যে রোহিত ভেমুলাকে বিজেপি নেতৃত্বের চাপে সাসপেন্ড করা হয়েছিল হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পর তিনি আত্মহত্যা করেন। নরেন্দ্র মোদী জমানায় দলিতদের উপর নিগ্রহের অভিযোগের সূত্রপাত সেখান থেকেই। রোহিতের মা রাধিকা ভেমুলা বলেন, ‘‘ঠিক ২০০ বছর আগে পুণেতে দলিতরা একজোট হয়ে পেশোয়া রাজকে পরাস্ত করে। নতুন পেশোয়াদের বিরুদ্ধে আমরাও লড়াই করে যাব। ক্রীতদাস থাকব না। বিজেপির চাপেই আমার ছেলে ও অন্য ৪ দলিত ছাত্রকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। ওরা দলিতদের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদ করছিল।’’ রোহিতের মায়ের কথায়, তাঁর ছেলের সঙ্গে যা হয়েছে, অন্যদের ক্ষেত্রে যেন না-হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাতিরেই একজোট হয়ে পরাস্ত করতে হবে বিজেপি-আরএসএসকে।

Advertisement

মোদী জমানায় যেভাবে দলিত-নিগ্রহ, অসহিষ্ণুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তার বিরুদ্ধে সরব হয়ে উমর খালিদ বলেন, ‘‘আমার বন্ধুরা আমাকে পুণেয় আসতে বারণ করেছিল। তারা বলে, পুণে নিরাপদ নয়। কিন্তু আমি বলি, শুধু পুণে নয়, গোটা ভারতই এখন বিপজ্জনক। আমরা লড়াই থামাব না।’’ সদ্য রাহুল গাঁধীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে গুজরাত ভোটে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জিগ্নেশ মেবাণী। গুজরাতের উনাতে দলিতদের উপরে নির্যাতনের পর থেকেই প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠেন জিগ্নেশ। আজকের সভায় তিনিও ছিলেন বড় আকর্ষণ। বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর কথা বলে জনতাকে তাতিয়ে তোলেন তিনিও। বলেন, ‘‘পথে নেমে আন্দোলনের মধ্যে আসে। সেই আন্দোলনই চালিয়ে যেতে হবে একজোট হয়ে।’’

দিল্লি থেকে এই মহাসভা অনেকটা দূরে হলেও বিজেপি নেতৃত্বের কাছে এই দলিত মহাজোট আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠেছে। অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ মহাসঙ্ঘ এই সভা বাতিলের দাবিতে মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারের দ্বারস্থ হয়েছিল, যার মুখিয়া দেবেন্দ্র ফডনবীশ নিজেও বাহ্মণ। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক মঞ্চ ব্যবহার করেননি প্রতিবাদীরা। সভা বাতিল করে বিতর্ককে আরও উস্কে দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাননি বিজেপি নেতৃত্ব। বরং রাজনৈতিক ভাবেই এর মোকাবিলা করতে চায় বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement