প্রতীকী ছবি।
মাঝে কিছু দিন কমছিল দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফের তা বাড়তে থাকা নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে কেন্দ্রকে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে একাধিক রাজ্যে। এই অবস্থায় সংক্রমণে রাশ টানতে রাজ্যগুলিকে আরও বেশি করে আরটি-পিসিআর, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার উপরে জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এমনকি অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ফল ‘নেগেটিভ’ এলেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে বলা হচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিকে।
পরিস্থিতি বুঝে সমস্ত রাজ্যের মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ। সেখানে সপ্তাহে অন্তত চার দিন প্রতিষেধক দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। লেখা হয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্র বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথাও। টিকাকরণে লক্ষ্য ছুঁতে ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে যা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
নভেম্বরের পর থেকে দেশে সংক্রমণের হার কমলেও, কেরল ও মহারাষ্ট্র থেকে ধারাবাহিক ভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর আসছিল। এই মুহূর্তে দেশের মোট ৭৪% সংক্রমিত ব্যক্তির ঠিকানা ওই দুই রাজ্য। তার উপরে কেন্দ্রের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব ও ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে। তা বেড়েছে জম্মু-কাশ্মীরে। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির তালিকায় এই বড় রাজ্যগুলির নাম যোগ হওয়ায় চিন্তিত স্বাস্থ্য কর্তারা। নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলের কথায়, “অনেকে ভাবছেন, করোনা ভাইরাস চলে গিয়েছে অথবা দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেখা যাচ্ছে মাস্ক না-পরার প্রবণতা। এই বোকামি করোনাকে নতুন শক্তিতে ফিরতে সাহায্য করতে পারে। ইউরোপ তার প্রমাণ।’’
জানুয়ারিতে হওয়া সর্বশেষ সেরো সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশের বড়জোর ২৮-৩০ কোটি মানুষ জেনে বা না-জেনে কোভিড সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, দেশের বাকি প্রায় ১০০ কোটি জন এখনও এই রোগের শিকার হতে পারেন। বিনোদের কথায়, “মাস্ক পড়তে হবে। মেনে চলতে হবে দূরত্ব ও সুরক্ষাবিধি।”
স্বাস্থ্য কর্তাদের আশঙ্কা, এক বছরে করোনা ভাইরাসের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বদলেছে। বিদেশ থেকে নতুন ‘স্ট্রেন’ আসার পাশাপাশি মহারাষ্ট্রেও নতুন ‘দেশজ স্ট্রেন’ পাওয়া গিয়েছে। যার সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এই নতুন স্ট্রেন ছড়িয়ে পড়লে, ফের সারা দেশে লকডাউন করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাই দেরি না-করে রাজ্যগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে একাধিক পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্র, দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির কথা যেমন সেখানে বলা হয়েছে, তেমনই জোর দেওয়া হয়েছে কড়াকড়ি মানার বিষয়ে। বিশেষত যে সমস্ত জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে কনটেনমেন্ট জ়োনে কড়া নজরদারি ও পরীক্ষা চালাতে হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। দিল্লির পরামর্শ, ‘মিউট্যান্ট স্ট্রেন’ পাওয়া গেলে, অবশ্যই জিনোম সিকোয়েন্স করতে হবে। যে সব জেলায় মৃত্যুহার বেশি, সেখানে নজর রাখতে হবে সার্বিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপরেও।