ঘূর্ণিঝড়ের পর ফের বাঁচার চেষ্টায়।
ইয়াস সরছে। তবে এখন হু-হু করে হাওয়া দিচ্ছে। ঝোড়ো হাওয়ার শব্দ বাড়ির ভেতর থেকেও মালুম হচ্ছে। মাঝে মাঝেই দমকা হাওয়ার দাপট দরজা জানলায় সশব্দে আছড়ে পড়ছে। আকাশ ঘন মেঘে ঢাকা। আলো কম। সাধারণ দিনে শেষ বিকেলে যেমন থাকে। তবে যেটা আশ্চর্য লাগছে, বেশ কয়েকঘণ্টা কোনও বৃষ্টি নেই। অনেকক্ষণ বৃষ্টি না হওয়ায় রাস্তাঘাটের জলও নেমে গিয়েছে। অন্য অনেকবার দেখেছি, ঘূর্ণিঝড় চলে গেলে বৃষ্টি হয় অনেকক্ষণ। এ বারে সেটা নেই।
প্রশাসন থেকে দুপুর ১২টার আগেই সতর্ক করেছিল। আগামী তিন ঘণ্টা বাড়ির বাইরে বেরোতে বারণ করেছিল ওরা। সেই কারণেই বালেশ্বরের রাস্তাঘাট এখনও ফাঁকা। আমাদের বাড়ির সামনের ওটি রোড এখনও জায়গায় জায়গায় বন্ধ রয়েছে। এই রাস্তার উপরেই বালেশ্বরের বড় বাসস্ট্যান্ড। দূরপাল্লার বাসগুলোও এখান থেকেই ছাড়ে। এখন কোভিডের জন্য সবই অনিয়মিত। তাই বাঁচোয়া। নিয়মিত থাকলে আজ অনেক বাসের যাত্রা বাতিল করতে হত। কারণ আর কিছু না, রাস্তার দু’ধারে অনেক গাছ পড়ে গিয়েছে। এখনও বালেশ্বর শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়নি প্রশাসন। তবে বিদ্যুৎ দফতরের লোকেরা রাস্তাঘাটে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পরিদর্শন করে গিয়েছে।
ইয়াস এখন নীলগিরি পাহাড়ের দিকে সরে গিয়েছে। ময়ূরভঞ্জ জেলার কপ্তিপদার দিকে। স্থলভাগে এলেই ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি কমে যায়। মনে হচ্ছে এ যাত্রা উতরে গেলাম। তবে ভোররাতে যে ভয়ানক অভিজ্ঞতা দিয়ে দিন শুরু হয়ছিল, তার তুলনায় এখন অনেকটাই স্বস্তি বোধ করছি। ধীরে ধীরে ঝড়ের প্রকোপ কমবে। চারপাশ শান্ত হবে। তবে বালেশ্বর জেলার বরজদেউলি, বাহাগনা, তালখেদার মতো গ্রামগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই গ্রামগুলো সমুদ্রের ধারে। ল্যান্ডফল এরিয়ার মধ্যে পড়ে গিয়েছে। আর গরিব মানুষের বাড়িঘর ভেঙে গেলে বিপদ অনেক বেশি। তবে প্রশাসনের তরফে স্কুলবাড়িগুলোয় আগেই সরিয়ে আনা হয়েছিল ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের। সরকারের তরফেই তাদের খাবারদাবারও দেওয়া হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি বালেশ্বর জেলা। তাই প্রতি বছরই কোনও না কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী হই আমরা। সব ঝড়ই কিছু না কিছু রেখে যায়। ইয়াসও সেই রকম বহু স্মৃতি রেখে যাবে আমাদের শহরে।