অশান্তির আগুন। পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ। সোমবার শ্রীনগরে। ছবি: রয়টার্স
ইদের সকালেও ছেদ পড়ল না অশান্তিতে। মঙ্গলবারও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে উত্তাল হল কাশ্মীর। গুলি চলল। মৃত্যুও হল। উপত্যকার ১০টি জেলাতেই জারি রয়েছে কার্ফু। ইতিহাসে প্রথম বার শ্রীনগরের বিখ্যাত হজরতবাল মসজিদের ইদগাহে ইদের নমাজ আয়োজিত হয়নি। বড় জমায়েত রুখতে কাশ্মীরবাসীকে নিজের নিজের এলাকার ইদগাহে নমাজ পড়তে বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। আর অশান্তির আগুন উস্কে দিতে যথারীতি প্ররোচনা এসেছে সীমান্তের ও পার থেকে। কাশ্মীরবাসীর ‘সর্বোচ্চ কুরবানি’র প্রতি এই ইদকে উৎসর্গ করছে পাকিস্তান, ঘোষণা পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের।
ইদের দিন কাশ্মীরের ১০টি জেলাতেই কার্ফু জারি করার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। সেই সঙ্গে বন্ধ রাখা হয়েছে মোবাইল পরিষেবা। ফলে উৎসবের দিনে উপত্যকার বাসিন্দাদের কার্যত ঘরবন্দি হয়েই থাকতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিনই পুঞ্চে আর দুই জঙ্গির দেহ উদ্ধার করল বাহিনী। পুঞ্চের অভিযানে এ নিয়ে খতম হল পাঁচ জঙ্গি। আবার ওই জেলারই সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিদের অন্য একটি দলের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে সেনার। অনন্তনাগে একটি পুলিশ পোস্টে গ্রেনেড হানায় নিহত হয়েছেন বিলাল আহমেদ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা। আহত হয়েছেন তিন পুলিশকর্মী।
দু’মাস ধরে অশান্তির জেরে কাশ্মীরে ইদের মেজাজ এমনিতেই উধাও। তার উপরে গত কালই চারটি এলাকায় জঙ্গি-বাহিনী সংঘর্ষের জেরে আরও মুষড়ে পড়েছে ভূস্বর্গ। আজ রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, আগামিকাল রাজ্যের ১০টি জেলাতেই কার্ফু জারি করা হবে। রাজ্যে নজরদারি চালাতে ড্রোন বিমান ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করবে বাহিনী। উপত্যকায় বিএসএনএল পোস্ট-পেড কানেকশন ছাড়া সব পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে জুলাই মাস থেকেই। প্রয়োজনে ল্যান্ডলাইনে ইন্টারনেটও বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য প্রশাসন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মেহর্ষির দাবি, ‘‘কাশ্মীর স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা আশা করছি ইদ শান্তিতেই কাটবে।’’
ইদে ‘‘আজাদি যাত্রা’’ ও রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষকের অফিসের দিকে মিছিলের ডাক দিয়েছেন বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতারা। রাজ্য সরকারের এক কর্তার কথায়, ‘‘এই সুযোগে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বড় ধরনের হিংসা ও রক্তপাত ঘটানোর চেষ্টা করবে বলে খবর পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সে জন্যই বাধ্য হয়ে ফের কার্ফু জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বন্ধ করতে হয়েছে মোবাইল পরিষেবাও।’’
গত কাল পুঞ্চের একটি বসতবাড়ি ও এক নির্মীয়মাণ সরকারি ভবনে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় বাহিনীর। বসতবা়ড়িটির মালিক কংগ্রেস সমর্থক হাজি নাসির মির। তিনি জম্মু-কাশ্মীর বিধান পরিষদের এক সদস্যের আত্মীয়। জঙ্গি হামলার সময়ে নাসির ও তাঁর স্ত্রী মুমতাজ একটি ঘরে নিজেদের আটকে রেখেছিলেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। আর কুমার নামে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হন। খতম হয় তিন জঙ্গি।
আজ নির্মীয়মাণ সরকারি ভবনে দুই জঙ্গির দেহ উদ্ধার করেছে বাহিনী। সেখানে অভিযান এখনও শেষ হয়নি। জঙ্গিদের খুঁজে বের করতে চালকহীন ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। পুঞ্চেরই সীমান্ত এলাকায় সেনার এক টহলদারি দলের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে ৪-৫ জন জঙ্গির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে ২০-২৫টি এলাকায় তৈরি রয়েছে জঙ্গিরা। সুযোগ পেলেই তাদের কাশ্মীরে ঢুকিয়ে দিতে মরিয়া চেষ্টা চালাবে পাকিস্তান।