বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ছবি-এএফপি।
আগে ভোট, তার পর দেশপ্রেম! জওয়ানের জীবন। বুঝিয়ে দিলেন এনডিএ-র নেতারা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। পটনায়, রবিবার।
দেশের জন্য জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারায় জঙ্গিদের গুলিতে শুক্রবার প্রাণ হারান সিআরপিএফের ইন্সপেক্টর পিন্টু কুমার সিংহ। রবিবার সকালে তাঁর মরদেহ পটনার জয়প্রকাশ নারায়ণ বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এনডিএ-র কোনও বড়, মাঝারি নেতা, নেত্রীকেই দেখা যায়নি বিমানবন্দরে। দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকেও। পটনায় আসা কয়েক জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এক জনকেও দেখা যায়নি বিমানবন্দরে।
পুলওয়ামা কাণ্ডের পর থেকে দেশপ্রেমের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে যে এনডিএ নেতৃত্বের বুকের ছাতি কয়েক গুণ বাড়তে দেখা গিয়েছে, তাঁরাই এ দিন পটনার বিমানবন্দরে যেতে পারেননি, পটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা ভরাতে হবে বলে! সেই জনসভায় পৌঁছনোর জন্য পটনা আর তার আশপাশের এলাকাগুলিতে ভোর থেকেই আসছে ‘সঙ্কল্প’ মিছিল। সামনে লোকসভা ভোট বলে সেই ‘সঙ্কল্পে’-ই তাঁদের মন সঁপেছেন এনডিএ-র বড় ও মাঝারি নেতা-নেত্রীরা।
১৩০ কিলোমিটার দূরের বেগুসরাই থেকে পটনায় ভাইয়ের মরদেহ দেখতে এসে নিহত সিআরপিএফ জওয়ানের কাকা তাই আর ক্ষোভ সামলাতে পারলেন না। বলেই ফেললেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও এলেন না আমার ভাইকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।’’ রাজনীতিকদের মধ্যে এসেছিলেন বিহার কংগ্রেসের প্রধান মদন মোহন ঝা ও লোক জনশক্তি পার্টির সাংসদ চৌধুরী মেহবুব আলি কায়সার। তবে এনডিএ নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ মানুষজনকে এও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘ওঁদের দলের সমাবেশ থাকলে হয়তো ওঁরাও আসতেন না!’’ সিআরপিএফের নিহত ইন্সপেক্টরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পটনার বিমানবন্দরে এ দিন হাজির ছিলেন জেলাশাসক কুমার রবি, সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তারা।
আরও পড়ুন- প্রশান্ত কিশোরকে জেডিইউ-তে নিতে অমিত শাহ ফোন করেছিলেন নীতীশকে!
আরও পড়ুন- কাশ্মীর সীমান্তে ভয়ঙ্কর গোলাবর্ষণ পাকিস্তানের, কুপওয়ারায় চলছে সেনা জঙ্গি লড়াই
সুযোগটা হাতছাড়া করেননি বিহার কংগ্রেসের প্রধান মদন মোহন ঝা। বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনীতি করতে এখানে আসিনি। শেষ শ্রদ্ধা জানাতেই এসেছি।’’
আসন্ন লোকসভা ভোটে বিহারে এনডিএ-র সঙ্গে যাদের আসন সমঝোতা হয়েছে, সেই লোক জনশক্তি পার্টির সাংসদ চৌধুরী মেহবুব আলি কায়সারও তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। বলেছেন, ‘‘ব্যাপারটা খুব চোখে লাগছে। পটনার জনসমাবেশ নিয়ে নিজে ব্যস্ত থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী এখানে পাঠাতে পারতেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর মন্ত্রিসভার কোনও প্রবীণ মন্ত্রীকে। সেটাও করেননি!’’
দিনপনেরো আগে কিন্তু পরিস্থিতিটা অন্য রকম ছিল। পুলওয়ামা কাণ্ডে নিহত বিহারের দুই জওয়ানের দেহ পৌঁছনোর পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পটনার বিমানবন্দরে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ।