নীতীশ কুমার যে ভাবে সমর্থন করেছেন রামবিলাসকে, তাতে বিজেপি-র অস্বস্তি বাড়তে বাধ্য। ছবি: পিটিআই।
বেসুরো একের পর এক শরিক। এনডিএ সংসারে অশান্তির আবহ আরও বাড়ল। এ বার বেসুরো নীতীশ কুমার। বেসুরো উত্তরপ্রদেশের বিজেপি-শরিক এসবিএসপি-ও। দুর্নীতির সঙ্গে যেমন আপস করবেন না, তেমনই আপস করতে পারবেন না বিভাজনের রাজনীতির সঙ্গে— জল্পনা উস্কে দিয়ে মন্তব্য নীতীশের। আর কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়ে এসবিএসপি প্রধান তথা যোগী মন্ত্রিসভার সদস্য ওমপ্রকাশ রাজভড়ের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি এখন ক্ষমতার অহঙ্কারে মত্ত।’’
সোমবার জেডি(ইউ) দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন দলের সভাপতি তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। অররিয়া লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আরজেডি-র জয়ের পরে সেখানে দেশবিরোধী স্লোগান উঠেছে এবং দ্বারভাঙায় এক বিজেপি সমর্থকের মাথা কেটে নেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ বিজেপি-র তরফ থেকে তোলা হয়েছে, নীতীশ কুমার সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে এ দিন রাজি হননি। কিন্তু বিহারের আর এক দল লোকজনশক্তি পার্টির প্রধান তথা মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য রামবিলাস পাসোয়ান সম্প্রতি বিজেপি-র যে সমালোচনা করেছেন, নীতীশ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সেই সমালোচনার প্রতি নিজের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
এনডিএ শরিক তথা মোদী ক্যাবিনেটের অংশীদার লোকজনশক্তি পার্টি শনিবার বিজেপি-র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে। দলের প্রধান তথা কেন্দ্রীয় খাদ্য, গণবণ্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান বলেছেন, ‘‘আমরা সবকা সাথ সবকা বিকাশ-এর কথা বলি। কিন্তু আমাদের তা বাস্তবে করে দেখানো উচিত। কংগ্রেস যখন দেশ শাসন করেছে, তখন যে ভাবে সমাজের সব অংশকে সঙ্গে নিয়ে চলেছে, এনডিএ-রও সে ভাবেই সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলা উচিত।’’
আরও পড়ুন: হট্টগোলে মুলতুবি সংসদ, অনাস্থা প্রসঙ্গ উঠলই না
রামবিলাসের এই মন্তব্যে কংগ্রেসের প্রশংসা স্পষ্ট। ফলে শরিক নেতার এই মন্তব্য যথেষ্ট অস্বস্তিকর বিজেপি-র পক্ষে। সোমবার সেই অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিলেন আর এক শরিক নেতা তথা বিহারে বিজেপি-র বড় শরিক নীতীশ। সাংবাদিক সম্মেলনে নীতীশ বললেন, ‘‘তিনি কোনও ছোট নেতা নন। তিনি যা বলেছেন, তাকে আমিও সমর্থন করছি। তিনি গত রাতে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং আমাদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁর মতামতকে আমাদের শ্রদ্ধা করা উচিত।’’
সমাজের সব অংশকে সঙ্গে নিয়ে কী ভাবে চলতে হয়, তা কংগ্রেসের কাছ থেকে শেখা উচিত বিজেপি-র— পাসোয়ানের মন্তব্য অনেকটা এ রকমই। —পিটিআই থেকে নেওয়া ফাইল চিত্র।
বিহারের মতো উত্তরপ্রদেশেও বিজেপি-র অস্বস্তি বাড়িয়েছে শরিক দল। সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির (এসবিএসপি) প্রধান তথা যোগী মন্ত্রিসভার সদস্য ওমপ্রকাশ রাজভড় বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, আমরা সরকারের এবং এনডিএ-র অঙ্গ, কিন্তু বিজেপি জোটধর্ম পালন করছে না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমি অনেক দিন ধরেই নিজের উদ্বেগ ব্যক্ত করছি, কিন্তু এঁরা লোকসভায় ৩২৫টি আসন থাকার অহঙ্কারে মত্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’’
রাজভড়ের অভিযোগ, শরিক দল হিসেবে তাঁর যে গুরুত্ব পাওয়া উচিত, তা তিনি পাচ্ছেন না। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ যদি তাঁর সঙ্গে দেখা না করেন, তা হলে আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে তাঁর দল বিজেপি-কে সমর্থন করবে না বলে রাজভড় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: রাজা, কানিমোঝির বেকসুর খালাসকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ইডি
রাজভড়ের দল এসবিএসপি-র বিধায়ক সংখ্যা ৪। উত্তরপ্রদেশে ১০টি রাজ্যসভা আসনের জন্য নির্বাচন হবে। এসবিএসপি-র সমর্থন না পেলেও বিজেপি ৮টি আসনে জিতবে। কিন্তু ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন অমিত শাহরা। রাজভড়ের দল সমর্থন না করলে নবম আসনে বিজেপি-র জয় আটকে যেতে পারে।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী রবিবারই মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘বিজেপি ক্ষমতার অহঙ্কারে মত্ত।’’ উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র শরিক দলের নেতা এ বার সেই একই মন্তব্য করলেন। তার সঙ্গে রাজ্যসভা ভোটে সমর্থন না করার হুমকিও দিয়ে রাখলেন। অস্বস্তি যে লাফিয়ে বাড়ছে বিজেপি নেতৃত্বের, তা নিয়ে কোনও মহলেরই সংশয় নেই।
অন্ধ্রপ্রদেশে তেলুগু দেশম ইতিমধ্যেই এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রে শিবসেনার সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে। তার মধ্যেই বিহারে মুখ খুললেন রামবিলাস, সমর্থন করলেন নীতীশ। উত্তরপ্রদেশেও বিরূপ হল শরিক দল। শরিকি ক্ষোভ সামলানোই ক্রমশ দায় হয়ে উঠছে মোদী-শাহ জুটির কাছে।