ফাইল চিত্র।
প্রায় দশ ঘণ্টা কাঠফাটা গরমে ভাজা ভাজা হওয়া যাত্রীরা যে হাঙ্গামা বাঁধাতে পারেন, সেই আশঙ্কা ছিলই। বিক্ষোভ ঠেকাতে মোতায়েন করা হয়েছিল রেল পুলিশও।
কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। প্রথমে গয়া ও পরে মানপুর স্টেশনে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় বসে থাকা গয়া-হাওড়া এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ক্ষোভের শিকার হয় শিয়ালদহ রাজধানী। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে ৭টি কামরার কাঁচ ভাঙে। আহত হন রাজধানীর জনা দশেক যাত্রী।
কাল গয়া-কিউল সেকশনে একটি সেতু জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছিল। সকাল ১১.৪০ থেকে বেলা ৩.৪০ পর্যন্ত ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেল। ঠিক ছিল, দুপুর সাড়ে বারোটার গয়া-হাওড়া এক্সপ্রেস গয়া থেকে ছাড়বে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। কিন্তু সারাইয়ে ব্যবহৃত একটি ক্রেন ভেঙে পড়লে ঝামেলা বাড়ে। লাইন খোলা না পাওয়ায় গয়া থেকে সময়ে ছেড়েও পরের স্টেশন মানপুরে দাঁড়িয়ে পড়ে গয়া-হাওড়া এক্সপ্রেস। তেতে থাকা দক্ষিণ বিহারের গরমে পুড়তে থাকেন যাত্রীরা। টান পড়ে স্টেশনের খাবারে। অভিযোগ, স্টেশনের কলগুলিতেও পর্যাপ্ত জলও ছিল না।
যাত্রীদের বিক্ষোভ বাড়ছে বুঝতে পেরে সন্ধ্যার পর থেকেই বারবার পূর্ব-মধ্য রেলের সদর দফতর হাজিপুরে বাহিনী চেয়ে জরুরি বার্তা পাঠাতে থাকেন মানপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ। রাত ন’টা নাগাদ স্টেশন মাস্টারের ঘরে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। কোনও মতে পরিস্থিতি সামলায় গুটিকয়েক রেল পুলিশ ও জিআরপি। এরই মধ্যে যতবার পাশ দিয়ে দিল্লিগামী কোনও ট্রেন চলে গিয়েছে, যাত্রীদের ক্ষোভ তত বেড়েছে।
রাত ১০.৪৩। দিল্লিগামী রাজধানীকে ধীর গতিতে মানপুর স্টেশন পার হওয়ার নির্দেশ দেয় কন্ট্রোল রুম। কিন্তু লাইনে লোক বসে থাকায় ট্রেন থামাতে বাধ্য হন চালক। রাজধানী থামতেই কাচের জানলা লক্ষ্য করে উড়ে আসতে থাকে পাথর। কয়েক মিনিট থামার পরে ফের চলতে শুরু করে ট্রেন। পূর্ব মধ্য রেলের মুখপাত্র রাজেশ কুমারের কথায়, ‘‘প্রায় ৭টি কামরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে আহত হন। ট্রেন সাত মিনিট পরে গয়া পৌঁছলে আহত যাত্রীদের চিকিৎসা করা হয়।’’ বি-২ কামরার এক শিশুর কাচের আঘাত লাগে। বাবা-মা মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য গয়াতেই নেমে যান। কালকের ঘটনায় কয়েক জনকে আটক করা হলেও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অশ্বিনী লোহানি।
আজ সকালে রাজধানী ট্রেনটি এক ঘণ্টা দেরিতে দিল্লি পৌঁছেছে। আর গয়া এক্সপ্রেস হাওড়া পৌঁছেছে সাড়ে তেরো ঘণ্টা পরে!