পোশাকি পরিচয়, সর্বহারার পার্টি! কিন্তু আশঙ্কা এখন গরিব মানুষের মধ্যে ভিত হারানোর। তা সামাল দিতেই গরিবের জন্য বাড়ির ভিত তৈরিতে হাত লাগাচ্ছে সিপিএম!
নদী-পুকুর পরিষ্কার থেকে শুরু করে ব্যথা প্রশমনকারী কেয়ার সেন্টার নির্মাণ, কোচিং সেন্টার খুলে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি— জনকল্যাণমূলক একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে কেরল সিপিএম। ত্রিশূরে দলের সদ্যসমাপ্ত ২২তম রাজ্য সম্মেলনে গৃহীত এমন সিদ্ধান্ত যথেষ্টই অভিনব! সরকারের কাজ বলেই যা এত কাল ধরা হয়েছে, সিপিএম কর্মীরাই এ বার সে সবে যুক্ত হবেন। রাজ্য নেতৃত্বের ঘোষণা, দলকে আরও জনমুখী করার লক্ষ্যে এ ভাবেই তাঁরা এগোতে চান।
গরিবদের বড় অংশের সঙ্গে যোগাযোগে মরচে ধরছে, এই মর্মে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ত্রিশূর সম্মেলনের সাংগঠনিক রিপোর্টে। তার পরেই সিদ্ধান্ত, এক বছরে গৃহহীনদের জন্য দু’হাজার বাড়ি তৈরি করবে দল। ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার সেন্টার’ গড়া হবে দু’হাজার। রাজ্য জুড়ে সাফাই অভিযান হবে দু’হাজার জলাশয়ে।
সূত্রের বক্তব্য, দলের প্রতিটি লোকাল কমিটিকে একটি করে বাড়ি, কেয়ার সেন্টার তৈরি করতে হবে এবং পরিষ্কার করতে হবে জলাশয়। বাম সরকার এখন ‘নব কেরল মিশন’ প্রকল্পে গরিবের জন্য বাড়ি তৈরির প্রকল্প নিয়েছে। শাসক দলের কর্মীরা সেই প্রকল্পের সঙ্গেই সহায়ক ভূমিকা নেবেন। ‘হরিতা কেরলম’ প্রকল্পের সঙ্গে জলাশয় সাফ করা হবে। দলের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের বক্তব্য, ‘‘প্রতি জেলায় অন্তত একটা করে নদী সংস্কার করব। সঙ্গে পুকুর বা অন্য জলাভূমি।’’
দলের ২০৯টি আঞ্চলিক কমিটিকে রাজ্য নেতৃত্বের পরামর্শ, একটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতাল দেখভালের দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। গড়ে তোলা হবে দু’হাজার কেয়ার সেন্টার। কমিটি ধরে ধরে কিছু কর্মী বেছে কেয়ার সেন্টারের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসা হবে চাকরির পরীক্ষার প্রশিক্ষণ শিবিরে।
এই পরিকল্পনা আপাতত শুধু কেরলেই। বাংলায় কোনও আলোচনা নেই। কেউ বলছেন, আরএসএস ও তাদের নানা অনুসারী সংগঠন এ ভাবেই জনভিত্তি তৈরি করে। কেরলে গেরুয়া ধাক্কার মুখে পড়ে সিপিএমও কি একই পথ নিল? বালকৃষ্ণনদের যুক্তি, দলকে তাঁরা আরও মাটির কাছাকাছি করতে চান বলেই এমন পরিকল্পনা।
ভিত খুঁড়ে আর জল ছেঁচে পায়ের তলার মাটিরক্ষা কত দূর হয়, শুরু হচ্ছে পরীক্ষা!