পিনারাই বিজয়ন। ফাইল চিত্র।
সদ্য শনিবারই বিজেপির বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলকে একজোট করার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার তিন দিনের মধ্যে বাংলায় ‘গণতন্ত্র হত্যা’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে দিল্লিতে হাজির করছে সিপিএম। অল্প দিন আগে মমতার সঙ্গে বিজয়নই একমঞ্চে গিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নস্যাৎ করার অভিযোগে সরব হয়েছিলেন।
সিপিএমের এ বারের প্রতিবাদ কর্মসূচি একই সঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বাংলায় তৃণমূল এবং ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকার কী ভাবে কেড়ে নিচ্ছে, জাতীয় স্তরে সেই ছবি তুলে ধরতে চায় বামেরা। সেই লক্ষ্যেই কাল, মঙ্গলবার সংসদের বাইরে ধর্না-বিক্ষোভ কর্মসূচি। বাংলা থেকে বিমান বসু এবং ত্রিপুরা থেকে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রতিনিধিদল নিয়ে দিল্লি যাওয়ার জন্য। ওই প্রতিবাদেই থাকবেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিজয়ন।
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, ‘‘তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে নানা কথা বলছেন। কিন্তু বাংলায় তাঁদের এবং ত্রিপুরায় বিজেপির সরকার যা করছে, তার মধ্যে কোনও তফাত নেই! বিজেপি আর তৃণমূল একই মুদ্রার দুই পিঠ। দুই রাজ্যের মানুষের প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রতি সহমর্মিতা জানাতে থাকবেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী।’’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে প্রতিবাদ তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে মমতার ডাকে কলকাতায় বিজেপি-বিরোধী কনক্লেভে কি তাঁরা সামিল হবেন? তৃণমূল নেত্রী তো বলেছেন, আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে তাঁর তরফে কোনও ভেদ-বিচার থাকবে না? ইয়েচুরির যুক্তি, মমতা বলেছেন শুধু। এখনও করেননি কিছু। আমন্ত্রণ পাওয়ার আগেই চূ়ড়ান্ত কোনও মন্তব্যের কী প্রয়োজন? তবে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও জোটে তাঁরা নেই, দলের এই অবস্থান পরিষ্কার। তৃণমূল-বিরোধী আন্দোলন তাঁদের যেমন চলছে, তেমনই চলবে।
দিল্লিতে সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন— এই পাঁচ বাম দলের তরফে কালকের ধর্না-অবস্থান হবে। নেতা, প্রাক্তন সাংসদ-সহ প্রতীকী কিছু লোক নিয়ে যাওয়া হবে বাংলা ও ত্রিপুরা থেকে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু জানান, কাল রাজ্য জু়ড়েও প্রতিবাদ কর্মসূচি থাকবে। শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন চত্বরে ঘণ্টাতিনেকের অবস্থান হবে কলকাতা ও হাওড়া জেলার আয়োজনে। আবার বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ হবে ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকার হরণের প্রতিবাদে।
ইয়েচুরির মতে, আম জনতার জীবন-জীবিকা, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা— সবই এখন আক্রান্ত। ত্রিপুরায় বিজেপি যেমন দ্রুত ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠছে, বাংলায় আবার তৃণমূল তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেরুকরণের রাজনীতিতে নেমেছে। এই সার্বিক কারণেই প্রতিবাদের পথ বেছে নেওয়া।