ত্রিপুরায় পঞ্চায়েতে ৯৬% আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়, বেকায়দায় বিজেপি

পাঁচ বছর পরে বাংলায় প্রথামাফিক পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল। কিন্তু ত্রিপুরায় তা-ও নয়। সেখানে ৬ মাস আগে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদের পদত্যাগে ‘বাধ্য’ করানো হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বাংলায় পুরনো সব নজির ছাপিয়ে এ বার পঞ্চায়েতে ৩৪% আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। তার জেরে বিতর্ক ও আইনি লড়াই হয়েছিল বিস্তর। তাতে শামিল হয়েছিল বিজেপিও। সেই বিজেপিই ত্রিপুরায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রায় ৯৬% আসন দখল করল বিনা লড়াইয়ে! যে তথ্য হাতিয়ার করে লোকসভা ভোটের আগে সিপিএম প্রচারে নামতে চলেছে— তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে বিজেপিকে ডেকে আনলে হাল হবে এমনই! সুযোগ পেয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে তৃণমূলও।

Advertisement

পাঁচ বছর পরে বাংলায় প্রথামাফিক পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল। কিন্তু ত্রিপুরায় তা-ও নয়। সেখানে ৬ মাস আগে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদের পদত্যাগে ‘বাধ্য’ করানো হয় বলে অভিযোগ। সদস্যেরা পদ ছেড়ে দেওয়ায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রাজ্যের ৩৫৬টি ব্লকের ৩৩৮৬টি আসনে পঞ্চায়েত উপনির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পেরোতে দেখা যাচ্ছে, মাত্র ১৬১টি আসনে ৩০ তারিখ ভোট করতে হবে। বাকি সব আসনই বিজেপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দখল নিয়েছে! শতাংশের বিচারে যা প্রায় ৯৬ এবং নজিরবিহীন! জেলা পরিষদের ৭টি আসনই ফয়সালা হয়েছে বিনা লড়াইয়ে।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌতম দাশ বলছেন, নভেম্বরে জনজাতি এলাকায় স্বশাসিত পরিষদে উপনির্বাচন রয়েছে। পুরসভার কিছু আসনেও অকাল ভোট হবে। সবই বর্তমান সদস্যদের ‘পদত্যাগে’র জের। বিজেপি যে কত বড় ‘গণতন্ত্র ধবংসকারী’ শক্তি, সেটাই তাঁরা মানুষের সামনে বলবেন। একই কথা বলছেন এ রাজ্যের মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরাও। ত্রিপুরার নেতারা কি আইনের পথেও যাবেন? গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও যে লাভ হয়নি, বাংলার ঘটনায় দেখা গিয়েছে। আদালতে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। আমরা যতটা পারব, মানুষকেই বলব।’’

Advertisement

তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাংলায় পঞ্চায়েতে ‘গণতন্ত্র হত্যা’র অভিযোগে বাজার গরম করেছিল বিজেপি। ত্রিপুরার উদাহরণ হাতে পেয়ে ওই রাজ্যে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক তথা বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত তাই পাল্টা বলছেন, ‘‘গণতন্ত্র নিয়ে আর কোনও কথা বিজেপির মুখে মানায়? বাংলায় একটা নির্বাচন ছিল। ত্রিপুরায় ভোটটাই হচ্ছে বিজেপির দাদাগিরির জন্য! সেখানেও কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হল না!’’ সব্যসাচীবাবু আরও উদাহরণ দিচ্ছেন, ত্রিপুরায় তাদের সরকারের শরিক আইপিএফটি-কেও রেয়াত করেনি বিজেপি।

সিপিএম অবশ্য তৃণমূল এবং বিজেপিকে একই বন্ধনীতে রেখে সরব হচ্ছে। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল আর বিজেপি একই মুদ্রার দুই পীঠ, এই তথ্যে আবার প্রমাণ হল। বাংলায় সেই মুদ্রার ‘হে়ড’ দেখা গিয়েছিল, ত্রিপুরা ‘টেল’ দেখছে!’’ বাংলায় বাম ও কংগ্রেসের ভোট ভেঙে লাগাতার বিজেপির বাক্সে যাচ্ছে। বিজেপিকে বিশ্বাস করার যে কারণ নেই, সেই বার্তা দিতে তাই আরও মরিয়া সূর্যবাবুরা এবং কংগ্রেস নেতৃত্বও।

কী বলছে বিজেপি? ত্রিপুরায় দলের পর্যবেক্ষক সুনীল দেওধরের মন্তব্য, ‘‘সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামেরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি! কমিউনিস্ট মুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে আমরা আর এক ধাপ এগোলাম!’’ বাংলায় তৃণমূল তো বিরোধীদের একই দুর্বলতার যুক্তি দিয়েছিল? বঙ্গ বিজেপির নেতা রাহুল সিংহের ব্যাখ্যা, ‘’৯৬ কেন, ১০০% হলেও কিছু বলার ছিল না! ত্রিপুরায় মনোনয়ন দিতে কেউ যায়ইনি! এখানে তো মেরেধরে মনোনয়ন আটকানো হয়েছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement