বুদ্ধ-মডেলে কেরলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চায় পলিটব্যুরো

দেশ জুড়ে দলিত, খাপ পঞ্চায়েতের মানসিকতা এবং অন্যান্য অধিকারের প্রশ্নে বিরোধীরা যখন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব, সেই সময়ে কেরলে এই ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে তাদের অস্বস্তি বাড়বে বলেই সিপিএম পলিটব্যুরো মনে করছে। তাই কেরল রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি তাদের পরামর্শ, শুধু আইনশৃঙ্খলা কঠোর হাতে সামলানোর জন্যই পূর্ণ সময়ের এক জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাখা হোক।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৮ ০২:১০
Share:

বিরোধী নেত্রী হিসেবে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বাম সরকারকে প্রবল বেগ দিচ্ছেন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে, সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছ থেকে নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে দিয়েছিলেন অনিল বিশ্বাসেরা। বুদ্ধবাবুই হয়েছিলেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিতর্কের মুখে কেরলের একমাত্র বাম-শাসিত সরকারে আলাদা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাখার সেই পুরনো টোটকাই ফিরিয়ে আনতে চাইছে সিপিএমের পলিটব্যুরো।

Advertisement

কেরলে স্বরাষ্ট্র দফতর এখন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের হাতেই। সম্প্রতি ওই দক্ষিণী রাজ্যে দলিত হত্যা এবং সম্ভ্রম রক্ষার জন্য খুনের ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়েছে। কোঝিকোড় জেলায় খাবার চেয়ে গণপিটুনিতে মরতে হয়েছিল এক দলিত যুবককে। কোট্টায়ম জেলায় অভিযোগ এসেছে সম্ভ্রম রক্ষায় খুনের। সেই অভিযোগ সামলাতে জেলা পুলিশ প্রথমে যা বয়ান দিয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেশ জুড়ে দলিত, খাপ পঞ্চায়েতের মানসিকতা এবং অন্যান্য অধিকারের প্রশ্নে বিরোধীরা যখন বিজেপির বিরুদ্ধে সরব, সেই সময়ে কেরলে এই ধরনের ঘটনা চলতে থাকলে তাদের অস্বস্তি বাড়বে বলেই সিপিএম পলিটব্যুরো মনে করছে। তাই কেরল রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি তাদের পরামর্শ, শুধু আইনশৃঙ্খলা কঠোর হাতে সামলানোর জন্যই পূর্ণ সময়ের এক জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাখা হোক।

নতুন কাউকে মন্ত্রিত্বে এনে তাঁকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হবে, নাকি মন্ত্রিসভায় রদবদল করে কারও হাতে স্বরাষ্ট্র দফতর দেওয়া হবে— এই ব্যাপারে সিদ্ধান্তের ভার অবশ্য কেরল সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শেষেই কেরলের তিনটি রাজ্যসভার আসনে ভোট হওয়ার কথা। তার মধ্যে দু’টি আসন বিধায়ক-সংখ্যার নিরিখে বামেরা জিততে পারবে। রাজ্যসভার প্রার্থী চূড়ান্ত করে তার পরে মন্ত্রিসভার রদবদলের পথে যাওয়া হতে পারে বলে দলীয় সূত্রের খবর। পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘গত দু’বছরে কেরলের এলডিএফ সরকার যথেষ্ট ভাল কাজ করেছে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, বিষয়টা এমন নয়। কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটছে, যার নেপথ্যে বৃহত্তর পরিকল্পনা কাজ করতে পারে বলে মনে হয়। সেই জন্যই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর কাজের ব্যস্ততার মধ্যে যাতে স্বরাষ্ট্রে নজর দুর্বল হয়ে না যায়, তার জন্যই পৃথক মন্ত্রী রাখার পরামর্শ।

Advertisement

অমিত শাহদের ঘোষণার পরে বিজেপি এবং আরএসএসের এখন বিশেষ নজর ওই দক্ষিণী রাজ্যে। সিপিএমের সঙ্গে প্রায়শই সঙ্ঘ-বিজেপির সংঘর্ষ বাধছে। তার পাশাপাশিই ঘটছে দলিত হত্যা বা সম্ভ্রম রক্ষায় খুনের ঘটনা। আদিবাসী ও দলিত অধিকার রক্ষায় সিপিএমের সর্বভারতীয় মঞ্চের তরফে ইদানীং সরব বৃন্দা কারাটের মতো নেত্রী। তাঁরও মতে, সঙ্ঘ-বিজেপির পরিকল্পনা সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত এবং পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন থাকলে রাজ্য সরকারের দ্রুত তা নিষ্পত্তি করা উচিত। এই তাগিদ থেকেই সিপিএম বিজয়নের ভার কমানোর ভাবনায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement