লোকসভায় কী হবে, আতঙ্কে আলিমুদ্দিন

বঙ্গ সিপিএমের লড়াই এখন বিরোধী পরিসর ধরে রাখার। যেখানে দ্রুত উঠে এসেছে বিজেপি। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল মেরুকরণের রাজনীতি করে বিজেপি-র সুবিধাই করে দিচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০১
Share:

ত্রিপুরায় সামনে নির্বাচন। প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপি। কেরলেও গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে টক্কর চলছে সমান তালে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে বাংলায় ভেঙে পড়া সংগঠন নিয়ে আরও বিপদে পড়ল সিপিএম!

Advertisement

বঙ্গ সিপিএমের লড়াই এখন বিরোধী পরিসর ধরে রাখার। যেখানে দ্রুত উঠে এসেছে বিজেপি। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল মেরুকরণের রাজনীতি করে বিজেপি-র সুবিধাই করে দিচ্ছে। এই জোড়া শত্রুর মোকাবিলায় আলিমুদ্দিন পাশে চাইছিল কংগ্রেসকে। কলকাতায় কেন্দ্রীয় কমিটির ভোটাভুটিতে সীতারাম ইয়েচুরির লাইন খারিজ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ও হতাশ বঙ্গ ব্রিগেড। তাদের আশঙ্কা, পার্টি কংগ্রেসে প্রকাশ কারাটের লাইনেই সিলমোহর পড়লে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় শূন্যে হয়ে যেতে পারে সিপিএম!

প্রবল মোদী হাওয়ায় ২০১৪ সালে বিপুল ভোট খুইয়ে সিপিএম পেয়েছিল মোটে দু’টি লোকসভা আসন। তার পর থেকে প্রায় সব ধরনের ভোটেই বিজেপি-র ভোট বেড়েছে এবং বামেদের আরও রক্তক্ষরণ হয়েছে। এমতাবস্থায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা থাকলে মুর্শিদাবাদ বা উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলায় সিপিএম লড়াই দেওয়ার জায়গায় থাকতো। কিন্তু একক ভাবে দাঁড়ালে ওই দু’টি আসনও হারানোর আশঙ্কা করছেন বঙ্গ সিপিএম নেতৃত্বের বড় অংশ। কারাট শিবিরের অনড় অবস্থান বারবার বাংলায় তাঁদের পথে বসাচ্ছে বলে ফুঁসছেন গৌতম দেবেরা!

Advertisement

সাধারণ অঙ্ক বলছে, একা লড়তে হলেও বামেদের চেয়ে লোকসভায় কিছুটা ভাল জায়গায় আছে কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদ, মালদহে চতুর্মুখী লড়াইয়েও তিন-চারটে আসন ধরে রাখার ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব আশাবাদী। কিন্তু তৃণমূলের বিজয়রথে সামান্য বাধা দেওয়ার উপায়ও কারাটদের দৌলতে জলে গেল বলে অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নানেরা মনে করছেন।

এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমঝোতার লাইন পাশ করানোর জন্য ঝাঁপিয়েছিলেন বঙ্গ সিপিএমের নেতারা। বৈঠকের পরেও দলের কর্মীদের হতাশা ও বিভ্রান্তি কাটানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তী যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, কোনও কেন্দ্রে বামেদের প্রার্থী না থাকলে সেখানে বিজেপি-কে হারাতে পারে এমন ধর্মনিরপেক্ষ প্রার্থীকে ভোট দেওয়া যাবে। আর কোনও রাজ্যে ধর্মনিরপেক্ষ কোনও আঞ্চলিক দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা না করেও সেই আঞ্চলিক দলের সঙ্গে সিপিএম আসন সমঝোতা করতে পারে!

শুধু সিপিএমই নয়, কারাটদের অবস্থান বাম রাজনীতির উপরেও প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন অন্যান্য বাম দলের নেতৃত্ব। পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক সমীর পূততুণ্ড যেমন বলছেন, জাতীয় রাজনীতিতে বামেদের দুর্বলতার জন্যই বিজেপি-র উত্থান ঘটেছে। এখন আবার তাদের বিভ্রান্তির ফলে বিজেপি-র সুবিধা হচ্ছে। তবে তাঁর আশা, এখনও চাইলে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য গড়ে তুলে বামপন্থীদের লড়াইয়ে সিপিএম অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।

কারাটদের মনোভাবে ক্ষোভ বাড়ছে কংগ্রেসেও। কেরলের বর্ষীয়ান এআইসিসি নেতা এ কে অ্যান্টনি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি-র বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে সঙ্গে নেব না, এ কথা বলা ‘বিশ্বাসঘতকতা’র সামিল! আর এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের আহ্বান, ‘‘সিপিএম দিশা ঠিক করতে পারছে না। তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে যাঁরা লড়তে চান, তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গে আসুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement