এক রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা। অন্য রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রবল লড়াই! বিপরীত ছবি শুধু এখানেই শেষ নয়। বিধানসভা ভোটের প্রার্থী বাছাই করতে গিয়েও সম্পূর্ণ দুই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গ ও কেরল সিপিএম!
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আঙিনায় এ বার সিপিএম লড়াই করবে মূলত তরুণ ও নতুন ব্রিগেডকে নামিয়ে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দু’জন বাদে দলের রাজ্য নেতৃত্বের চেনা মুখদের আর কারও নাম প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় নেই। সেখানে কেরলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ১৫ জনের মধ্যে অন্তত ১১ জনই ভোটে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক! তার মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্যও আছেন। সচরাচর সিপিএমে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ স্তরে থাকা নেতাদের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামানো হয় না। কিন্তু কেরলে এ বার একেবারে উল্টো ছবি! শেষ পর্যন্ত প্রার্থী বাছাইয়ের রূপরেখা কী হবে, তা ঠিক করতে দক্ষিণী এই রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়েছে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে। কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক বসেছে মঙ্গলবার। আজ, বুধবার বসছে রাজ্য কমিটি।
বিভিন্ন জেলা থেকে বিধানসভা ভোটের যে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা আলিমুদ্দিনে জমা পড়েছে, তাতে নাম রয়েছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র ও সুজন চক্রবর্তীর। দলের রাজ্য সম্পাদক হয়ে যাওয়ার পরে সূর্যবাবু আর ভোটে দাঁড়াবেন কি না, সেই বিতর্কের অবশ্য এখনও ফয়সালা হয়নি। সূর্যবাবুর মতোই কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনও বিধায়ক। কিন্তু তিনি এ বার নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না বলে দলকে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর পূর্বসূরি পিনারাই বিজয়ন অবশ্য প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ঘোরতর ভাবে আছেন!
কেরল সিপিএম সূত্রের খবর, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ই পি জয়রাজন, টমাস আইজ্যাক, এ কে বালান, ই করিম, এ আনন্দন, ববি জন, এম ভি গোবিন্দন, কে জে টমাস, এম এম মানি, টি পি রামকৃষ্ণন— এঁরা সকলেই ভোটে দাঁড়াতে ইচ্ছুক তো বটেই। জেলা থেকে খোঁজখবর নিয়ে সম্ভাব্য কেন্দ্রও বেছে ফেলা হয়েছে! বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনকে ফের টিকিট দেওয়া হবে কি না, তা অবশ্য কোটি টাকার প্রশ্ন! গত দু’বারই প্রথমে প্রার্থী তালিকায় ভি এসের নাম রাখা হয়নি। প্রবল গণ-বিক্ষোভের মুখে তাঁকে টিকিট দিতে হয়েছিল। এ বার বয়সের কারণে তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়াবেন কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে ভি এস বলে রেখেছেন, এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তিনি ঠিক সময়ে জানিয়ে দেবেন! তিরুঅনন্তপুরমের এ কে জি সেন্টারে এ দিন আলোচনায় ইয়েচুরি ভি এস-কে বলেছেন, নবতিপর এই নেতা চাইলে ফের প্রার্থী হতেই পারেন। ভি এস অবশ্য পাল্টা জানিয়েছেন, দলের রাজ্য নেতৃত্ব এ ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেন, তা তিনি দেখতে চান!
এখনও বিধায়ক এবং পলিটব্যুরোর সদস্য এম এ বেবি অবশ্য সরাসরি ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেননি। আবার বালকৃষ্ণনের মতো দাঁড়াবেন না-ও বলেননি! তবে দলের একটি সূত্রের খবর, আগামী এপ্রিলে কেরল থেকে রাজ্যসভার একটি আসনে এম এ বেবিকে জিতিয়ে আনতে চান প্রকাশ কারাটেরা। সে ক্ষেত্রে দু’বারের বেশি সিপিএমে কাউকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয় না, এই প্রথা ভাঙতে হবে বেবির জন্য। কারাটদের ইচ্ছা, আগামী বছর রাজ্যসভায় ইয়েচুরির মেয়াদ শেষ হলে সংসদে দলের রাশ নিন বেবি। কিন্তু তাতে আবার পাল্টা প্রশ্ন উঠছে, যদি দু’বারের বেশি রাজ্যসভায় না পাঠানোর প্রথা ভাঙতেই হয়, সেটা সাধারণ সম্পাদকের জন্যই বা কেন হবে না!
সেই প্রশ্নের মীমাংসার আগে অবশ্য বিধানসভার টিকিট নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সিপিএমকে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘কেরলে এ বার বামেদের ফ্রন্ট এলডিএফের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা যথেষ্ট। তাই অনেকেই ভাবছেন, প্রার্থী হয়ে জিতে আসতে পারলে মন্ত্রিসভা গঠনের সময়ে সুবিধা পাওয়া যাবে! কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্যাপার আলাদা। সেখানে পুরনো মুখ সরিয়ে নতুনদের সামনে আনার জন্যই দলের ভিতরে-বাইরে চাপ আছে।’’