আগামী লোকসভা ভোটে সিপিএমের রণকৌশল কী হবে, তা ঠিক করেই উঠতে পারল না দলের পলিটব্যুরো।
আগামী বছর এপ্রিলে সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস। তাতেই ঠিক হবে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের রণকৌশল। সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও সূর্যকান্ত মিশ্রদের মত, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের হাত ধরা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু কংগ্রেসের কথা খোলাখুলি বললে সমস্যা হবে জেনে তাঁরা বলছেন— এখনই ভোটের কৌশল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা দরকার। সব দরজাই খোলা রাখা হোক।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, পলিটব্যুরোয় ইয়েচুরিদের এই মতটি সংখ্যালঘু। প্রকাশ কারাট ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন শিবিরেরই পাল্লা ভারি। তাঁদের মত— রাজ্যেই হোক বা জাতীয় স্তরে, কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা নয়। তিন বছর আগে পার্টি কংগ্রেসে যে কৌশল ঠিক হয়েছিল, সেটাই বজায় থাকুক। কারণ এর মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির তেমন বদল হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে পলিটব্যুরো কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ঠিক হয়েছে, দু’টি মত এবং তার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি নিয়ে ১৪ অক্টোবর থেকে তিন দিনের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিতর্ক হবে। সেখানেই আগামী বছর এপ্রিলে পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রস্তাবের খসড়া চূড়ান্ত হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে যা-ই সিদ্ধান্ত হোক, পলিটব্যুরোর মধ্যে এই অনৈক্যের ফলে প্রশ্ন উঠেছে— পার্টি কি এ বার ভাঙনের মুখে? পলিটব্যুরোয় প্রতি পদে বাধার সম্মুখীন হয়ে কত দিন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ চালাতে পারবেন সীতারাম ইয়েচুরি? কিছু দিন আগেই ইয়েচুরিকে রাজ্যসভায় পাঠানোর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল কারাট-পিনারাই শিবির। সেই নিয়ে বাংলার নেতাদের এখনও ক্ষোভ রয়েছে। তাঁদের মতে— কারাট-শিবির প্রতি পদে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে, ইয়েচুরি পলিটব্যুরোতে সংখ্যালঘু। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে বঙ্গ-ব্রিগেডকে।
সিপিএমের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, পলিটব্যুরোয় সাধারণ সম্পাদকের মতামতই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা মানছেন না— এমন পরিস্থিতি আগেও তৈরি হয়েছে। প্রয়াত জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাবে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু পলিটব্যুরোর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তা খারিজ করে দেয়। তার আগে জরুরি অবস্থার সময়ও দলের রণকৌশল নিয়ে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক পি সুন্দরাইয়ার যুক্তি পলিটব্যুরো মানেনি। যার পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরাইয়া পদত্যাগ করেন।
কিন্তু আদি কমিউনিস্ট পার্টিতে পলিটব্যুরোর মধ্যে অনৈক্য থেকেই যে ১৯৬৪-তে পার্টিতে ভাঙন ধরে, সিপিএম তৈরি হয়— সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন দলের নেতারা।