মাত্র সাত মাস আগে এই দক্ষিণী ভূমেই প্রবল যুদ্ধ হয়েছিল সিপিএমের অন্দরে! বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে তবেই খোলা হয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার দরজা। সেই হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেসের আয়োজক রাজ্য তেলঙ্গানাতেই কংগ্রেসের সঙ্গে এখন সমঝোতায় নেই সিপিএম!
আবার বাংলায় কংগ্রেসের হাত ছেড়ে বাম ঐক্যের ধ্বজা ঊর্ধ্বে রাখার কথা অহরহ বলেন বাম শরিক নেতারা। তেলঙ্গানায় বাম ঐক্যকে হাওয়ায় উড়িয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে ভোটে লড়তে নেমেছে শরিক সিপিআই! পরিস্থিতি এমনই যে, কয়েকটি আসনে সিপিএম এবং সিপিআই নিজেদের প্রতীকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়তেও পারে!
দক্ষিণ ভারতে তেলঙ্গানা এমন এক ভূখণ্ড, যেখানে বাম আন্দোলনের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেই জমিতেই লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বাম রাজনীতির ‘স্ব-বিরোধিতা’ প্রকট আকার নিচ্ছে। ঘটনাচক্রে, অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের ভূমিপুত্র স্বয়ং সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার তত্ত্বের প্রবল প্রবক্তা!
বিজেপিকে প্রধান শত্রু মেনেও বামেদের পথ কেন এ ভাবে ভাগ হয়ে গেল? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ওয়াই ভি রাওয়ের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের নির্বাচনী জোট তৈরি হয়েছে ভোটের মাসখানেক আগে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা প্রশ্নে আমরা লড়াই করছি। সেখান থেকে বেরিয়ে শুধু ভোটের জন্য কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা ঠিক হত না।’’ তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণেও বীরভদ্রম, ওয়াই ভি-রা মনে করেন বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসকে বন্ধু ভাবার মানে হয় না। তাতে ভোটে যা হয়, হোক!
সিপিআইয়ের তেলঙ্গানা রাজ্য সম্পাদক সি বেঙ্কট রেড্ডি আবার বলছেন, ‘‘টিআরএস এবং বিজেপিকে রুখতে জোট বেঁধে লড়াইটাই উপযুক্ত পথ। জোটের প্রস্তাব আমরা দিয়েছিলাম। কয়েকটা আসন নিয়ে টানাটানির জন্য জোট ভাঙবে না।’’
তেলঙ্গানায় বিধানসভা ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে সোমবার, মনোনয়ন জমা দেওয়া চলবে আরও এক সপ্তাহ। এখনও পর্যন্ত যা ছবি উঠে এসেছে, তাতে রাজ্যের ১১৯টি আসনেই লড়াই করছে বহুজন বামফ্রন্ট (বিএলএফ)। অম্বেডকরপন্থী এবং নানা দলিত সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে এই ফ্রন্ট তৈরির হোতা ছিলেন সিপিএমের তেলঙ্গানা রাজ্য সম্পাদক তাম্মিনেনি বীরভদ্রম। বিএলএফের শরিক হিসেবে সিপিএম এখনও পর্যন্ত ২৩টি আসনে নিজস্ব প্রতীকে প্রার্থীদের নাম ঠিক করেছে। অন্য দিকে, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস তাদের জোটসঙ্গী টিডিপি-কে ১৪টি, তেলঙ্গানা জন সমিতি (টিজেএস)-কে ৮টি এবং সিপিআইকে তিনটি আসন ছেড়েছে। সিপিআই অবশ্য আরও দু’টি আসন চেয়ে দরাদরি চালাচ্ছে। বিধানসভার উচ্চ কক্ষ বিধান পরিষদেও সিপিআইয়ের আসনের ভাগ আছে।
বিএলএফ এবং কংগ্রেসের জোট লড়াই করছে এক দিকে শাসক তেলঙ্গানা রাষ্ট্রসমিতি (টিআরএস) এবং আর এক দিকে বিজেপির বিরুদ্ধে। অর্থাৎ যুদ্ধ চতুর্মুখী।
ঘটনাপ্রবাহে নীরবই আছেন ইয়েচুরি। যদিও তাঁর সাধারণ লাইন হল— রাজ্যভিত্তিক আলাদা বোঝা়পড়াই সিপিএমের কৌশল। তেলঙ্গানার হাওয়া খেয়ে সেই কৌশল বাংলায় কী চেহারা নিয়ে আসে, নীরবে নজর রাখছে আলিমুদ্দিনও!