প্রাক্তন ও বর্তমান। নয়াদিল্লিতে সিপিএমের পলিটব্যুরো বৈঠকে প্রকাশ কারাটের সঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরি। শনিবার। ছবি: পিটিআই।
একসঙ্গে ভেলপুরি খাওয়াকেই এখন বড় হাতিয়ার করতে চাইছেন সিপিএমের নতুন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির সঙ্গে যুঝতে এ বার দু’দলের ‘গোপন আঁতাত’ নিয়ে প্রচারে ঝাঁপাবে সিপিএম।
দিল্লিতে দলের পলিটব্যুরো বৈঠকে আজ তৃণমূল-বিজেপি ঘনিষ্ঠতার নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, ভোটের সময় তৃণমূল-বিজেপি পরস্পরকে আক্রমণ করে ধর্মীয় মেরুকরণ করছে। এখন সেই দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যেই বোঝাপড়া হয়ে যাওয়ায় সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তও ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, দু’দলের আঁতাত নিয়ে পূর্ণ শক্তিতে প্রচার চালাবে সিপিএম। এবং দলের নতুন পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমকে তাই পুরোপুরি পশ্চিমবঙ্গে মনোনিবেশ করতে বলেছে দল।
সম্প্রতি কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ও কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে ধরনের সৌহার্দ্য দেখা গিয়েছে, তাতে সিপিএম নেতাদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। যে বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে ভোটের সময় রাজ্য সরকার অস্ত্র আইনে মামলা করেছিল, তাঁকেই এখন ভিক্টোরিয়ার সামনে ভেলপুরি খাওয়াচ্ছেন মমতা। সিপিএম নেতারা মনে করছেন, সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত থেকে বেরিয়ে আসতেই
সরাসরি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সখ্যের পথ নিয়েছেন মমতা। সংসদে বিভিন্ন বিলে সমর্থনও জানাচ্ছে তৃণমূল। তাতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে মমতার লাভও হচ্ছে। লোকসভা ভোটের সময় তিনি বিজেপির জুজু দেখিয়ে সংখ্যালঘু ভোট নিজের দিকে টেনে এনেছিলেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা দিল্লির বিজেপি নেতাদের সঙ্গে মমতার সৌহার্দ্যের ফলে রাজ্যের বিজেপি নেতাদের আক্রমণও ভোঁতা করে দিচ্ছেন মমতা।
অতীতে কংগ্রেসের ক্ষেত্রেও সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে সখ্যের জোরে এই ভাবেই মমতা রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের আক্রমণ উড়িয়ে দিতেন বলে সিপিএম নেতাদের বিশ্লেষণ।
এখন সিবিআই তদন্তে ভাঁটা পড়ায়, আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সারদা কেলেঙ্কারির অস্ত্রও ভোঁতা হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সিপিএম নেতারা।
কিছু দিন আগে আগরতলায় প্রোটোকল মেনে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন বলে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে নিশানা করেছিলেন মমতা। তিনিই এখন প্রধানমন্ত্রীকে লাল কার্পেট পেতে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। এ কথা উল্লেখ করে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আজ বলেন, ‘‘এ হল মারাত্মক সুবিধাবাদী রাজনীতি।’’ লোকসভা ভোটের সময়ে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে যে রকম বাগ্যুদ্ধ দেখা গিয়েছে, তা এখন উধাও। ইয়েচুরির তাই ধারণা, দু’পক্ষে গোপন চুক্তি হয়ে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই রাজনৈতিক বোঝাপড়াও হতে চলেছে। এবং এই সূত্রেই ইয়েচুরির কটাক্ষ ‘‘তৃণমূলের ক্ষেত্রে বিজেপি তার ‘ঘর ওয়াপসি’ প্রকল্প সফল ভাবে রূপায়ণ করেছে।’’
পলিটব্যুরোর নতুন সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যের নিচু তলার মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাঙা হচ্ছে। উপরে মোদীভাই ও দিদিভাইয়ের গলায়-গলায় ভাব চলছে।’’ সেলিম এখন লোকসভায় উপ-দলনেতা। এ বারের পার্টি কংগ্রেসে তিনি পলিটব্যুরোয় এসে যাওয়ায় পি করুণাকরণকে সরিয়ে তাঁকেই লোকসভার দলনেতা করার প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু সেলিম পশ্চিমবঙ্গেই বেশি সময় দেবেন বলে ঠিক হয়েছে। লোকসভায় আগের ব্যবস্থাই বহাল থাকবে।
পার্টি কংগ্রেসের পরে নতুন পলিটব্যুরোয় কাকে কী দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়েও আজ আলোচনা হয়। বিশেষ করে সংগঠনের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই কৌতূহল বেশি। আগামী কাল বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। তবে এখন পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তাতে সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি নিজের হাতেই সংগঠনের দায়িত্ব রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এত দিন এই দায়িত্ব ছিল এস আর পিল্লাইয়ের হাতে। তবে বছরের শেষে সংগঠনের সমস্যা নিয়ে বিশেষ প্লেনামের কথা মাথায় রেখে পলিটব্যুরোর ৩-৪ জন সদস্যকে নিয়ে একটি উপ-কমিটি তৈরি হতে পারে এ ব্যাপারে।