প্রতীকী ছবি।
উলটপুরাণ!
শুধুমাত্র মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছিলেন বলে কেরলের শাসকদল সিপিএম তাদের এক মন্ত্রীকে শোকজ করেছিল। কারণ পুজো করা, ধর্মীয় মতবাদে বিশ্বাস করা বা সিপিএমের নীতি বিরুদ্ধ। কিন্তু সেই কেরলই এ বার অন্য রূপ দেখতে চলেছে রাজ্যের সিপিএম নেতৃত্বের। কেরলে ঘটা করে একমাস ব্যাপী রামায়ণ মাস পালন করতে চলেছে সিপিএম!
১৭ জুলাই থেকে ১৬ অগস্ট, টানা এক মাস মলয়ম মাস কার্কিদাকমচলে। এই মলয়ম মাস রামায়ণ মাস হিসাবেও পরিচিত। এই সময়ে অনেক হিন্দু পরিবারই প্রতিদিন রামায়ণ পাঠ করেন। এতদিন হিন্দু পরিবারগুলো নিজেদের মতো করেই এই আচার পালন করত। কিন্তু এ বার সেটাকেই ঘটা করে রাজ্য জুড়ে পালন করতে চলেছে কেরলের শাসকদল। মাসভর জেলা ভিত্তিক ছোটখাটো অনুষ্ঠান চলবেই, ২৫ জুলাই সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠানটি হবে। যেখানে হিন্দু বেদ এবং রামায়ণ নিয়ে আলোচনা হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন সিপিএমের এই পরিবর্তন অবশ্য শুরু হয়েছিল আগেই। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসে। তার ঠিক দু’বছর পর থেকেই জন্মাষ্টমী অনুষ্ঠানের সঙ্গে দলীয় কর্মীদের যুক্ত করতে শুরু করে কেরল সিপিএম। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন, তার আগে কোনওভাবেই যাতে ধর্মীয় ভাবাবেগকে হাতিয়ার করে বিজেপি মাটি শক্ত করতে না পারে কেরলে, তার জন্য আঁটঘাট বেঁধেছে সিপিএম।
আরও পড়ুন: শশীর হিন্দু-পাকিস্তান মন্তব্যের জের, সতর্ক করল কংগ্রেস
কেরলের সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। রাজ্য কমিটির সদস্য কে শিবাসদন সাফ জানিয়ে দেন, এই উৎসবের আয়োজন করেছে সংস্কৃত সঙ্ঘম। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম কোনওভাবেই এর সঙ্গে যুক্ত নয়। সংস্কৃত সঙ্ঘম কিছু উৎসবের আয়োজন করেছে মাত্র।’’ প্রকৃতপক্ষে এই সংগঠনটি সিপিএমেরই সহযোগী সংগঠন। প্রকাশ্যে মানতে না চাইলেও দলের অন্দরের খবর, আয়োজক ওই সংগঠন হলেও রামায়ণ মাস নিয়ে যাবতীয় পরিকল্পনা আসলে সিপিএমেরই।
আরও পড়ুন: লোকসভার আসন ভাগাভাগি নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনায় নীতীশ
কেরলের মাটি আঁকড়ে থাকার জন্য সিপিএমের এই ধার্মিক প্রয়াসকে বেশ তাচ্ছিল্যের সুরে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কে সুরেন্দ্রন বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে ওই দলটি তার সবচেয়ে প্রিয় নীতিটাই ভুলে গিয়েছে, সেটা হল দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ ’’। তিনি আরও অবাক হয়ে বলেন, ‘‘অনেক সময়ই ভগবান রামকে তাঁরা ব্যঙ্গ করেছেন; এখন আচমকা কী ভাবে রাম এবং তাঁর কাহিনীর গুণ গাইতে পারেন তারা।’’
তিনি আরও জানান, ২০০৯ সালে কেরল সিপিএম তাদের দলের নীতি নির্দেশিকার একটি সংশোধিত নথি প্রকাশ করে। তাতে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য দলের নির্দেশিকার খসড়া প্রকাশ করা হয়। তার একটিতে স্পষ্ট করে লেখা ছিল, কোনওরকম সামাজিক, জাতিবিশেষ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুশীলন যা দলের নীতিবিরুদ্ধ তা করা যাবে না। প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগত ভাবে এমন কাজ দলের নেতা-কর্মীরা করতে পারবেন না।
গত বছর কেরলের মন্দির বিষয়ক মন্ত্রী কারাকমপল্লি সুরেন্দ্রন স্থানীয় গুরুভায়ুর মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়েছিলেন। সে খবর কানে আসার পরই দল তাঁকে শোকজ করেছিল। সেই সিপিএমের এই ভোলবদলে অবাক রাজনীতিবিদেরা।