গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে গো-ভক্তেরা
গো-ভক্তির নামে মানুষ খুন মেনে নেওয়া যায় না— প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের গো-ভক্তদের হাতে খুন হলেন ঝাড়খণ্ডের এক মাংস ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে রামগড়ের বাজারটাঁড়ের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম আসগার আলি ওরফে আলিমুদ্দিন (৫০)। আলিমুদ্দিন যে গাড়িতে করে ওই মাংস নিয়ে যাচ্ছিলেন সেই গাড়িটিকেও ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে গো-ভক্তেরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিমুদ্দিন নয়াসরাই ব্লকের মনুয়া গ্রামের বাসিন্দা। রামগড়ের চিতরপুর বাজার থেকে মাংস কিনে গ্রামে ফিরছিলেন। শহরের মধ্যেই বাজারটাঁড় নামে একটি জায়গায় গাড়িটিকে দাঁড় করায় কয়েক জন যুবক। গাড়িতে গো-মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অভিযোগ তুলে তারা আমিনুদ্দিনকে মারতে থাকে। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘একটা সাদা রংয়ের মারুতি ভ্যানকে ঘিরে ভিড় দেখে দাঁড়িয়ে যাই। দেখি এক মধ্যবয়স্ক মানুষকে গাড়ি থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করছে উত্তেজিত কিছু লোক। চলছে এলোপাথারি কিলঘুঁষি।’’
আরও পড়ুন- গো-ভক্তির নামে মানুষ খুন কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না: প্রধানমন্ত্রী
কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। পুলিশ আসার আগেই মারমুখী দুষ্কৃতীরা গাড়িটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। জ্বলন্ত গাড়ির কাছেই পড়েছিলেন আলিমুদ্দিন। পুলিশ আলিমুদ্দিনকে উদ্ধার করে রাঁচীর রিমসে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে রামগড়ের এসপি কৌশল কিশোর ও হাজারিবাগের ডিআইজি ভীমসেন টুটি ঘটনাস্থলে আসেন। রামগড়ের এসডিপিও শশী প্রকাশ বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির গাড়িতে পাঁচ-ছ’কেজির মতো মাংস ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। মাংসের ফরেন্সিক টেস্ট হবে।’’ তিনি জানান, ওই ব্যক্তিকে যখন উদ্ধার করা হয় তখন তিনি হাঁটতে পারছিলেন না। তাঁকে প্রথমে রামগড় সদর হাসপাতালে, পরে রাঁচীর রিমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। সন্ধ্যায় ডিআইজি জানান, অকুস্থল থেকে তাঁরা কিছু ছবি ও ভিডিও ফুটেজ জোগাড় করেছেন। তা দেখেই অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
ঘটনার পরে এলাকা এখনও থমথমে। বাজারটাঁড় এলাকার দোকানপাটও বন্ধ। পাশের জেলা হাজারিবাগ ও রাঁচী থেকে প্রচুর পুলিশ নিয়ে এসে রামগড়ে মোতায়েন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে গিরিডিতে উসমান নামে এক প্রৌঢ়কে গো-বধের ধুয়ো তুলে গণধোলাই দেয় দুষ্কৃতীরা। উসমানের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দু’দিন কাটতে না কাটতেই ফের একই ঘটনা।
এ দিনের ঘটনাটির কথা কানে যায় আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের। তিনি সিবিআই আদালতে হাজিরা দিতে আজ রাঁচীতে রয়েছেন। লালু বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মুখে যাই বলুন না কেন, আসলে তাঁর প্ররোচনাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।’’
—নিজস্ব চিত্র।