টিকার দামে বৈষম্য নিয়ে কেন্দ্রকে তিরস্কার সুপ্রিম কোর্টের। —ফাইল চিত্র।
দেশকে করোনামুক্ত করার সঙ্কল্প নিয়েছে সরকার। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র এবং রাজ্যের ক্ষেত্রে টিকার দাম আলাদা কেন? কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের উদ্দেশে ফের প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। শুধু তাই নয়, কোন রাজ্য আগে টিকা পাবে, আর কোন রাজ্য পরে, তা কিসের ভিত্তিতে ঠিক করছে সরকার, তারও জবাব চেয়েছে আদালত।
অতিমারি পরিস্থিতিতে চূড়ান্ত অব্যবস্থা নিয়ে আগেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছিল শীর্ষ আদালত। শুক্রবার তার শুনানি চলাকালীন টিকার দাম নিয়ে কেন্দ্রকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। টিকার দাম থেকে বণ্টন, কেনার প্রক্রিয়া সব কিছুতেই বৈষম্য রয়েছে কেন, প্রশ্ন তোলে আদালত।
মূল্যবিভেদ নিয়ে কেন্দ্রের উদ্দেশে আদালত বলে, ‘‘আপনাদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নিলেও রাজ্যগুলির কাছ থেকে ৩০০-৪০০ টাকা নিচ্ছে টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি। দেশের নাগরিক হিসেবে এই বৈষম্য মানব কেন আমরা? এ ক্ষেত্রে খরচের ব্যবধান তো প্রায় ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা! টাকা দিয়েই যখন কিনব, তখন এই বিভেদ কেন? আমরা কোনও নির্দেশ দিচ্ছি না, কিন্তু আপনাদের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।’’ আমেরিকায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা এর চেয়েও কম দামে টিকা বিক্রি করছে বলেও মন্তব্য করে আদালত।
১মে থেকে দেশে ১৮ ঊর্ধ্বদের টিকাকরণ শুরু হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রের চেয়ে বেশি দামে টিকা কেনার সামর্থ নেই বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে একাধিক রাজ্য। তার জেরে সম্প্রতি রাজ্যগুলির জন্য প্রতি প্রতিষেধকের দাম ৪০০ থেকে কমিয়ে ৩০০ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেন সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুণাওয়ালা। ভারত বায়োটেক রাজ্যগুলির জন্য দাম ৬০০ থেকে কমিয়ে ৪০০ করেছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ৬০০ টাকায় কোভিশিল্ড কিনতে হবে। কোভ্যাক্সিন কিনতে হবে ১২০০ টাকায়।
প্রস্তুতকার সংস্থার কাছ থেকে ৫০ শতাংশ কিনে রাজ্যগুলিকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বাকি ৫০ শতাংশ রাজ্যগুলিকে নিজের কোষাগার থেকেই খরচ করতে হবে। তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতিরা। আদালতের যুক্তি, ‘‘কেন্দ্র নিজে কেন ১০০ শতাংশ টিকা কিনছে না? কারণ সমান ভাবে টিকা বণ্টন সেখান থেকেই সবচেয়ে ভাল ভাবে হতে পারে। যে ৫০ শতাংশ কেন্দ্র দেবে বলছে, সেটা কখন দেওয়া হবে, কাকে আগে দেওয়া হবে, তা নিয়ে কোনও ঘোষণা নেই কেন? কেন্দ্র বা রাজ্য যে-ই টিকা কিনুক না কেন, তা সাধারণ মানুষের জন্য কেনা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা দাম কেন?’’
১৮ ঊর্ধ্ব থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের সার্বিক টিকাকরণের কথা ঘোষণা করলেও দেশে ওই বয়সি মানুষের সংখ্যা ঠিক কত, সে নিয়ে কোনও তথ্য নেই কেন, অনলনাইনে টিকাকরণের যে নিয়ম বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্র, তাতে নিরক্ষর মানুষরা কী ভাবে নাম নথিভুক্ত করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে আদালত।