নাম নথিভুক্ত করার পর তৎক্ষণাৎ প্রতিষেধক নেওয়া যাবে। —ফাইল চিত্র।
করোনার টিকাকরণে অংশ নিতে আগে থেকে কো-উইন অ্যাপে নাম নথিভুক্ত না করলেও চলবে। বরং সরাসরি টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করে তৎক্ষণাৎ প্রতিষেধক নেওয়া সম্ভব এখন থেকে। জানিয়ে দিলেন ভারতে টিকাকরণ কর্মসূচিতে প্রযুক্তিগত সহায়তার দায়িত্বে থাকা এমপাওয়ারড কমিটির চেয়ারম্যান আরএস শর্মা। তিনি জানিয়েছেন, অ্যাপটি আপগ্রেড করে নিলেই প্রতিষেধক নিতে ইচ্ছুক সকলকে সুবিধা মতো দিনে টিকাকরণ কর্মসূচির অংশ করে নেওয়া সম্ভব হবে।
দেশ জুড়ে টিকাকরণ কর্মসূচি চালাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে কো-উইন অ্যাপের। টিকাপ্রাপকদের তালিকা থেকে মজুত রাখা প্রতিষেধক এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই কেন্দ্রের নখদর্পণে থাকে সব কিছু। যখনই কোনও ব্যক্তি ওই অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করেন, তাঁর কাছে একটি মেসেজ চলে যায়, যাতে বলা থাকে কখন, কোথায় প্রতিষেধক নিতে যেতে হবে তাঁকে। কিন্তু সেই নিয়েই গোল বেধেছে। কারণ নির্ধারিত দিনে প্রতিষেধক নিতে যেতে না পারলে, নতুন করে নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলা থাকে।
যে কারণে সরকার প্রতিটি কেন্দ্রে দৈনিক ১০০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেও, তা পূরণ হচ্ছে না। আগেভাগে নাম নথিভুক্ত করা থাকলেও, টিকাকরণ কেন্দ্রে পা রাখতে দেখা যাচ্ছে না তাঁদের। বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকাকরণে অংশ নিতে উৎসাহিত করতেই তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আরএস শর্মা বলেন, ‘‘প্রত্যেক টিকাকরণ কেন্দ্রে ১০০ জনকে প্রতিষেধক দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহু মানুষ প্রতিষেধক নিতে আসছেন না বলে জানতে পেরেছি আমরা। তাই অ্যাপটিতে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছি আমরা, যাতে সরাসরি টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করে তৎক্ষণাৎ প্রতিষেধক নিতে পারেন সাধারণ মানুষ। আবার আগে থাকতে নাম নথিভুক্ত করেও টিকাকরণ কেন্দ্রে না পৌঁছতে পারলে, সুবিধা মতো অন্য কোনও দিন তাঁদের ডেকে নেওয়া যাবে।’’
আগে থেকে যে তালিকা তৈরি থাকত, নির্ধারিত দিনে এত দিন শুধু তাঁদেরই প্রতিষেধক দেওয়া হতো। অতিরিক্ত কারও নাম গ্রহণ করত না কো-উইন অ্যাপের সফ্টওয়্যার। কিন্তু তালিকাভুক্ত সকলে প্রতিষেধক নিতে না এলে, দিনভরের পরিশ্রম বৃথা যেত। টিকাকর্মীদের ঠিকঠাক কাজে লাগানো যেত না, প্রতিষেধকও ফের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হত। তাই ভেবেচিন্তেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরএস শর্মা। তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে নির্ধারিত দিন ছাড়া অন্য কোনও দিনও টিকাকেন্দ্রে প্রতিষেধক নিতে যেতে পারেন মানুষ। আবার তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও যাঁরা অনুপস্থিত থাকবেন, তাঁদের জায়গায় অন্য কাউকে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে। তাতে সময় এবং সরঞ্জাম কিছুই নষ্ট হবে না।
তবে টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকেই কো-উইন অ্যাপটি নিয়ে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। অ্যাপটিতে গলদ রয়েছে বলে অভিযোগ এনে মহারাষ্ট্রে টিকাকরণও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। অ্যাপের সমস্যায় জেরবার হতে হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের টিকাকর্মীদেরও। যে হাতে লিখেই সমস্ত টিকা প্রাপকদের নামধামের তালিকা তৈরি করতে হয় তাঁদের। পরে স্বাস্থ্য দফতরকে সেই হার্ডকপিই পাঠানো হয়। কিন্তু আরএস শর্মার যুক্তি, ‘‘এত বড় কর্মসূচি, সামান্য বাধা বিপত্তি তো আশবেই। টিকাকরণের মহড়া আর সত্যি সত্যিই টিকাকরণ, দুইয়ের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। তাই মহড়ার সময় সমস্যাগুলো চোখে পড়েনি। তবে তেমন কোনও বড় সমস্যা নেই। যাঁরা সফ্টওয়্যারটি নিয়ে কাজ করছেন, প্রযুক্তিগত ভাবে তাঁরা কতটা দক্ষ, তার উপরও অনেক কিছু নির্ভর করে। ম্যানুয়ালি তথ্য আফলোড করার উপায়ও রয়েছে, তবে সেটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে। তবে টিকাকরণ চলাকালীন রিয়েল টাইমেই ,তথ্য আপলোড করতে হবে, নইলে একসঙ্গে পরে করতে গেলে অত সফ্টওয়্যারটির উপর চাপ বাড়বে।’’ টিকাকরণ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অ্যাপটি অত্যন্ত কার্যকর বলেও জানিয়েছেন তিনি।