—ফাইল চিত্র।
বিশ্বে কোভিড ভ্যাকসিনের যতগুলি ট্রায়ালই চলুক, সফল হওয়ার সম্ভাবনা হাতে গোনা কয়েকটির। এমনই জানাচ্ছেন গবেষকেরা। পরীক্ষা চলাকালীন অক্সফোর্ডের তৈরি কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে কিছু সমস্যা তৈরির পর পরই কতগুলি ভ্যাকসিন চূড়ান্ত ধাপ পেরোতে সক্ষম হবে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা, সংশয় তৈরি হয়েছে। আর সেখানেই প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে ভ্যাকসিনের সাফল্যের হারের প্রসঙ্গ।
বিভিন্ন সময়ে একাধিক রোগের ভ্যাকসিন পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরীক্ষা থেকে মাত্র সাত শতাংশ ‘ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট’ পরবর্তী ধাপে পৌঁছতে পারে। অর্থাৎ, ৯৩ শতাংশ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটই ব্যর্থ হয়। পরবর্তী ধাপে পৌঁছয় যারা, তাদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এই সম্ভাবনা খুবই আপেক্ষিক। পরীক্ষার সামান্য এ দিক-ও দিক হলেই ট্রায়াল ব্যর্থ হয়। এই মুহূর্তে বিশ্বে ১৭০টির মতো কোভিড ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যদি ধরেও নেওয়া যায় যে, প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পেরিয়ে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিন ট্রায়াল সফল হচ্ছে, তা হলেও খুব কম ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটই চূড়ান্ত ধাপ পেরোতে পারবে। বস্তুত, কোভিড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অত্যধিক তাড়াহুড়ো ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের সফল হওয়ার সম্ভাবনার মাত্রাকে আরও কমিয়ে দিচ্ছে বলে মত গবেষকদের। ভ্যাকসিন পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত এক গবেষকের কথায়, ‘‘যত জরুরি পরিস্থিতিই
হোক না কেন, পরীক্ষার জন্য ন্যূনতম সময় লাগেই।’’
অন্য একাধিক রোগের সফল ভ্যাকসিন পরীক্ষার উল্লেখ করে গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর শুধু ভ্যাকসিন দিয়ে ২০-৩০ লক্ষ মৃত্যু আটকানো যায়। ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, মিজ়লস-সহ ২০টিরও বেশি বিপজ্জনক রোগের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন দিয়ে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা যায়। কোভিডের ক্ষেত্রেও ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা না গেলে এই অতিমারি ঠেকানো যাবে না বলেই
মত গবেষকদের।
কারণ, তাঁরা জানাচ্ছেন, সার্স কোভ-২-এর সংক্রামক ক্ষমতা অন্য সব ভাইরাসের থেকে যে অনেক বেশি, তা সংক্রমণের প্রথম পর্যায়েই বোঝা গিয়েছিল। সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘কোঅর্ডিনেটেড গ্লোবাল রিসার্চ রোডম্যাপ’-এ কোভিড ভ্যাকসিনের রূপরেখার খসড়াও তৈরি করে ফেলা হয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স অ্যান্ড র্যাপিড রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশনস সেল ফর কোভিড ১৯’-এর প্রাক্তন এক টেকনিক্যাল অফিসারের কথায়, ‘‘ভ্যাকসিন না এলে প্রতি বাড়িতে এক জন করে কোভিড রোগী থাকার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণকে ঠেকানো মুশকিল।’’
কিন্তু তা করতে গিয়ে পরীক্ষার ধাপগুলি ঠিক মতো না মানার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে কোভিড ভ্যাকসিনের যে রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে সংক্রমণজনিত পরীক্ষা ও গবেষণার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ধরা হয়েছে। এক গবেষকের কথায়, ‘‘ধরে নেওয়া যেতে পারে যে শুধু সংক্রমণজনিত পরীক্ষা এবং গবেষণার জন্যই ওই সময় প্রয়োজন। সেখানে তার আগেই সব ধাপ সম্পূর্ণ করে ভ্যাকসিন বাজারে চলে এলে, সেটা আশ্চর্যজনক বটেই।’’
বেলেঘাটা আইডি-র সংক্রামক রোগ চিকিৎসক যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, অতীতে অনুন্নত দেশগুলিতে প্রায় নিয়ম না মেনেই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল করা হত। তাতে ভ্যাকসিন মানবশরীরে কী ক্ষতি করছে, তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা হত না। পরবর্তীকালে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, ‘‘পরীক্ষা-পদ্ধতি মানা হচ্ছে বলেই তো পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছিল। এটাকে একটা ইতিবাচক দিক হিসেবেই ধরতে হবে।’’