নোট বাতিলের ফলে মানুষের হাতে নগদ টাকার অভাব। কমেছে কেনাকাটা। তার জেরে অর্থনীতিতে নতুন করে নৈরাশ্য তৈরির আশঙ্কা দূর করতে শিল্পমহলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সরকারের তরফে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি শিল্পপতি ও বণিকসভার প্রতিনিধিদের ছোট ছোট দল তৈরি করে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন। জেটলি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, নগদ টাকার অভাবের জেরে সাময়িক ভাবে অর্থনীতির রথের গতি কমতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির ভিত আরও মজবুত হবে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, হঠাৎ করে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ফলে যে ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিতে ধাক্কা লেগেছে, তাতে চলতি বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার গত বছরের তুলনায় কমে যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রকের আশঙ্কা, বিক্রিবাটা কম হচ্ছে বলে শিল্পসংস্থাগুলিও উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে। জেটলি তাই শিল্পমহলকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, প্রাথমিক ভাবে মানুষের কেনাকাটার ক্ষমতা কমলেও দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিতে গতি আসবে।
কী ভাবে? জেটলি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এই ঘোষণার ফলে নগদে লেনদেন কমবে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে
লেনদেন বাড়বে। ফলে কর ফাঁকি কমবে। সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, চলতি অর্থ বছরে আয়কর ও কর্পোরেট কর থেকে সরকারের ৮ লক্ষ কোটি টাকা আয় হবে। পরোক্ষ কর থেকে আয় হবে প্রায় ৮.৫ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু তার পরেও উন্নয়ন ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন-পেনশনের পুরো খরচ মিটবে না। প্রতি বছরই কেন্দ্রকে ৪ থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিতে হয়। রাজস্ব বাবদ আয় বাড়লে এত টাকা ঋণ নিতে হবে না। রাজকোষ ঘাটতি কমবে। তার পরেও ঋণ নেওয়া হলেও সেই অর্থ গ্রামীণ পরিকাঠামো বা দারিদ্র দূরীকরণের মতো প্রকল্পে খরচ করা যাবে।
জেটলি শিল্পমহলকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ভারতে ব্যাঙ্কের ব্যবস্থার বাইরে অধিকাংশ লেনদেন হচ্ছে। নোট বাতিলের ফলে সাধারণ মানুষ নিজেদের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করছেন। এই যে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়ছে, সেই টাকাই কৃষি, শিল্প বা পরিকাঠামো তৈরির জন্য ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দিতে পারবে। ব্যাঙ্কগুলির পক্ষেও ঋণের উপর সুদের হার কমানো সম্ভব হবে। সরকারি সূত্রে খবর, সোমবার কয়েক জন শিল্পপতি ও বণিকসভার কর্তার সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠক করেছেন জেটলি। সঞ্জীব গোয়েন্কা, পবন মুঞ্জল, অ্যাপোলো হসপিটালস গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কয়েক জন ছিলেন বলে সরকারি সূত্রে দাবি। এর পরে ফের এই ধরনের ছোট ছোট দলে ভাগ করে শিল্পপতিদের
সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক হবে।
নিজে শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি জেটলি বিজেপির রাজ্য নেতাদেরও ব্যবসায়ী এবং শিল্পমহলকে বোঝাতে বলেছেন। আজ তিনি বিজেপির সদর দফতর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।