Pradhan Mantri Awas Yojana

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নাম তুলতে ঘুষ, টাকা পেতেও ‘কাটমানি’, রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গের এই ছবি

ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই গ্রামের এক মহিলার অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় নাম পেতে তাঁকে ২ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:২৩
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ ব্লকের বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই গ্রামের এক মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (গ্রামীণ) প্রথম কিস্তির টাকা জমা পড়ল। তার পরেই এক পঞ্চায়েত সদস্যের হাতে ১০ হাজার টাকা ‘কাটমানি’ দিতে হল। ওই গ্রামেরই অন্য এক ব্যক্তি অভিযোগ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পরে এক পঞ্চায়েত সদস্যকে ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছিল।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের রগড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। ওই গ্রামের এক মহিলার অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় নাম পেতে তাঁকে ২ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ওই মহিলার অভিযোগ, গ্রামে যাঁদের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় উঠেছে, তাঁদের প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে ‘পার্টি ফান্ড’-এ জমা করতে হয়েছে।

জলপাইগুড়ি জেলার ওদলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। এক ব্যক্তির সরকারি খাতায়-কলমে বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখনও বাড়ি তৈরির কাজ চলছে। বাঁকুড়ার জয়পুর, ইন্দাস ব্লকের তিন গ্রাম পঞ্চায়েতের আধ ডজন বাসিন্দার নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় তাঁদের চূড়ান্ত কিস্তির টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁদের কারও বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়নি।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ) প্রকল্পে কোন রাজ্যে কেমন কাজ চলছে, তা খতিয়ে দেখতে নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। গত বছর তিন দফায় এই সমীক্ষা চালানো হয়। দিল্লির একটি সামাজিক গবেষণা কেন্দ্রকে ‘জাতীয় স্তরের পর্যবেক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। তাদের তিন দফার রিপোর্টেই পশ্চিমবঙ্গের এই চিত্র উঠে এসেছে। শুধু ‘কাটমানি’-র তথ্য নয়। কোন ব্যক্তির থেকে কে টাকা আদায় করেছেন, কাদের নামে টাকা বরাদ্দ হলেও বাড়ি তৈরি হয়নি, তাঁদের নামও রয়েছে রিপোর্টে।

গত সপ্তাহেই দিল্লিতে এসে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার বকেয়া টাকার দাবিতে তৃণমূল বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। তার পরে রাজভবনের সামনেও ধর্নায় বসেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মূল অভিযোগ ছিল, আবাস যোজনায় রাজ্য সরকারের তরফে প্রথমেই এমন ১৭ লক্ষ পরিবারের নাম পাঠানো হয়েছিল, যাঁরা এই প্রকল্পে পাকা বাড়ির অর্থ পাওয়ারই যোগ্য নন। কেন্দ্রের কথায় সেই নাম বাদ গেলেও যাঁরা এই সব নাম তালিকায় ঢুকিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নেয়নি।

রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর কেন্দ্রের এই রিপোর্ট নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি। তবে তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে আগেই বলা হয়েছে যে কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকলে তার জন্য গোটা রাজ্যের মানুষের টাকা বন্ধ করে অসুবিধায় ফেলা কেন্দ্রের উচিত হচ্ছে না। কেউ অনিয়ম করলে তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হোক। তার জন্য যে গরিব মানুষের পাকা বাড়ির জন্য টাকা পাওয়ার কথা, তিনি কেন বঞ্চিত হবেন! উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারেরই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। মন্ত্রকের সুপারিশ সত্ত্বেও রাজ্য প্রশাসন সন্তোষজনক ব্যবস্থা নেয়নি।

গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, এখন পর্যবেক্ষক সংস্থার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অযোগ্য ব্যক্তিদের পাকা বাড়ির টাকা পাইয়ে দেওয়া ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পে অন্য অনিয়ম হয়েছে। প্রথম বার ২০২২-এর জানুয়ারিতে, দ্বিতীয় বার মে মাসে ও তৃতীয় বার অগস্ট-সেপ্টেম্বরে সমীক্ষা চলেছিল। প্রথম দুই দফার রিপোর্টে এই অনিয়মের ছবি ধরা পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় মূলত গৃহহীন ও দু’টি ঘরের কাঁচা বাড়িতে বসবাসকারী মানুষের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সরকারি মাপকাঠি মেনে গ্রামসভার প্রাথমিক ভাবে তালিকা তৈরি করার কথা। কারা কারা বাড়ি পাবেন, তার একটি স্থায়ী তালিকা গ্রামের সরকারি ভবনে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে চলতি বছরে কারা কারা বাড়ির টাকা পাবেন, তারও বার্ষিক বাছাই তালিকা তৈরি করে কোনও সরকারি ভবনে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেওয়াই নিয়ম।

সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, গত বছরের জানুয়ারিতে দেখা গিয়েছিল, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, বীরভূম, উত্তর দিনাজপুর, হুগলি, মালদা, পূর্ব বর্ধমানে সেই তালিকা সরকারি ভাবে ঝোলানো নেই। গত বছরের মে মাসের সমীক্ষায় সময় দেখা গিয়েছে, দার্জিলিং, দক্ষিণ দিনাজপুর, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম, কালিম্পং, পশ্চিম বর্ধমান, শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পুরুলিয়ায় দেখা গিয়েছে, যাঁদের নাম উঠেছে, তাঁরা বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুই জানেন না। কী ভাবে, কত কিস্তিতে টাকা আসবে, তা-ও তাঁদের জানা নেই। তা বুঝতে না পারার জন্য কাজের গতিও এগিয়েছে মন্থর গতিতে। সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজ্য প্রশাসনের ‘সহযোগিতার অভাবে’র জন্যই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণে বাড়ি পেয়েও অখুশি মানুষের হার সবথেকে বেশি। ১০০ জনের মধ্যে ৮ জনই সমীক্ষায় জানিয়েছেন, তাঁরা সন্তুষ্ট নন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement