দুর্নীতি দমন আইন

ভুল-দুর্নীতির ফারাক খুঁজে বদলের চিন্তা

একের পর এক দুর্নীতির ধাক্কায় মনমোহন সিংহ সরকারের জমানায় সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তও হয়েছে একাধিক ক্ষেত্রে। ফাইলে সই করতেই ভয় পেতেন সরকারি আমলারা। পাছে পরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সিবিআইয়ের ডাক পড়ে। কাঠগড়ায় উঠতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৪
Share:

একের পর এক দুর্নীতির ধাক্কায় মনমোহন সিংহ সরকারের জমানায় সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তও হয়েছে একাধিক ক্ষেত্রে। ফাইলে সই করতেই ভয় পেতেন সরকারি আমলারা। পাছে পরে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সিবিআইয়ের ডাক পড়ে। কাঠগড়ায় উঠতে হয়।

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেও তার পুনরাবৃত্তি রুখতে এ বার দুর্নীতি দমন আইনেই বদলের কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। আজ সিবিআইয়ের মঞ্চেই সে কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

আজ জেটলি যুক্তি দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভুল ও দুর্নীতির মধ্যে ফারাক করার প্রয়োজন। কারণ সত্যিই যেখানে সিদ্ধান্তের ভুল, সেখান থেকেই দুর্নীতির মামলা খাড়া করার চেষ্টা করেন তদন্তকারীরা। তাই ‘জনস্বার্থ’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত উপায়’ বা ‘আর্থিক সুবিধে’-র মতো অস্পষ্ট শব্দের নতুন করে সংজ্ঞা তৈরি করা প্রয়োজন। যাতে এর নানা রকম ব্যাখ্যা না হয়।

Advertisement

টুজি স্পেকট্রাম বা কয়লা খনি বণ্টন কেলেঙ্কারিতে সিবিআই দুর্নীতির সময়ে বার বার অভিযোগ উঠেছিল, সিবিআই শুধু দুর্নীতি নয়, কোনও সিদ্ধান্ত ঠিক না বেঠিক, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল। সরকারি আমলাদের যুক্তি ছিল, এখন যে সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে হচ্ছে, পরে সেটা বেঠিক প্রমাণ হতেই পারে। তার মানেই সেখানে দুর্নীতি হয়েছে, এমনটা নয়। আজ জেটলি বলেছেন, ‘‘দুর্নীতি দমন আইন আসলে তৈরি হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। অর্থাৎ ১৯৯১ সালের আর্থিক উদারীকরণের আগে।’’ অর্থমন্ত্রীর কথায়, ‘‘তখন অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ ছিল। সেই অনুযায়ীই দুর্নীতি দমন আইন তৈরি হয়। কিন্তু এখন সেই আইনের বদল প্রয়োজন।’’

দুর্নীতি দমন আইনের বদল নিয়ে এই প্রথম মোদী সরকারের কোনও মন্ত্রী মুখ খুললেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের মঞ্চ। বিজ্ঞান ভবনে সিবিআইয়ের প্রথম অধিকর্তা ডি পি কোহলি স্মারক বক্তৃতা দিতে গিয়ে এ কথা বলেন জেটলি। সেখানে সিবিআইয়ের অধিকর্তা অনিল সিন্হা ও সমস্ত উচ্চপদস্থ অফিসার হাজির ছিলেন। রঞ্জিৎ সিন্হা, আর কে রাঘবন, অমর প্রতাপ সিংহের মতো প্রাক্তন অধিকর্তা শুরু করে কর্মিবর্গ দফতরের মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ, সচিব সঞ্জয় কোঠারি, সিএজি শশীকান্ত শর্মাও উপস্থিত ছিলেন। জেটলি বলেন, কোনটা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভুল আর কোনটা দুর্নীতি, তার মধ্যে তদন্তকারীদেরই ফারাক করতে হবে। কিন্তু ১৯৮৮ সালের আইন এর মধ্যে ফারাক করতে পারে না। প্রাক্তন সিবিআই প্রধান রাঘবন জেটলির কথায় সায় দেন। প্রশ্ন ওঠে, কবে আইনে সংশোধন করা হবে? কর্মিবর্গ দফতরের মন্ত্রী জানান, শীঘ্রই এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। জেটলির আজকের যুক্তি মনমোহন-সরকারের জমানার পুরনো বিতর্ককেই উস্কে দিয়েছে। টুজি স্পেকট্রাম বা কয়লা খনি বণ্টনে দুর্নীতির পরে আর্থিক ক্ষেত্রে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল হলে তাকে দুর্নীতি বলে কাউকে অভিযুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছে। আদালতের অতিসক্রিয়তার অভিযোগও করেছে কোনও কোনও শিবির।

মনমোহন জমানায় দুর্নীতিকেই হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। ক্ষমতায় এসে তারাই উল্টো সুর গাইছে মনে হতে পারে বুঝে জেটলি বলেছেন, ‘‘বিরোধী দলে থাকার সময়েও আমার এই মত ছিল। আমাদের ব্যবস্থার মধ্যে দুর্বলতা থাকায় গণতন্ত্রের অন্য শাখার অতিসক্রিয়তা শুরু হয়েছিল।’’

আটকে ৮০ হাজার কোটি

সিবিআইয়ের হাতে যে সব অর্থলগ্নি সংস্থার মামলা রয়েছে তারা প্রায় ৬ কোটি ভারতীয়ের কাছ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা তুলেছে। সোমবার ডিপি কোহলি স্মারক বক্তৃতার সময়ে এ কথা জানান সিবিআই অধিকর্তা অনিল সিন্হা। তাঁর মতে, যতই দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হবে, ততই অপরাধের ধরন বদলাবে। আরও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর আন্তর্জাতিক অপরাধের মোকাবিলা করতে হবে। সে জন্য তদন্তকারীদের তৈরি থাকতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement