গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ হাজার ৭৫২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। সাত লক্ষের বেশি আক্রান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই রাশিয়াকে পিছনে ফেলে করোনাআক্রান্ত দেশগুলির তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ হাজার ৭৫২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল সাত লক্ষ ৪২ হাজার ৪১৭ জন।
আক্রান্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে বাড়ছে করোনার জেরে মৃত্যুও। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪৮২ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে দেশে মোট মৃত্যু হল ২০ হাজার ৬৪২ জনের। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ন’হাজার ২৫০ জনের। রাজধানী দিল্লিতে ধারাবাহিক ভাবে বেড়ে মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪১৫-তে। তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাতে মারা গিয়েছেন এক হাজার ৯৭৭ জন। গত মাসের শেষ দিক থেকে তামিলনাড়ুতেও ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে করোনার জেরে প্রাণহানি। যার জেরে দক্ষিণের এই রাজ্যে মোট মৃত এক হাজার ৬৩৬ জন। উত্তরপ্রদেশ (৮২৭), পশ্চিমবঙ্গ (৮০৪) ও মধ্যপ্রদেশে (৬২২) মৃত্যুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া শতাধিক মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে রাজস্থান (৪৭২), কর্নাটক (৪১৬), তেলঙ্গানা (৩১৩), হরিয়ানা (২৭৯), অন্ধ্রপ্রদেশ (২৫২), পঞ্জাব (১৭৫) ও জম্মু ও কাশ্মীর (১৪৩)।
আক্রান্ত দ্রুত হারে বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। এখন দেশে সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা রোগীর সংখ্যা সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যার চেয়ে বেশি। এখনও পর্যন্ত সাড়ে চার লক্ষের বেশি মানুষ সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ আক্রান্তের ৬১ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ৮৮২ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট চার লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৩০ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হলেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি রুখে দিয়েছিল কেরল। কিন্তু মহারাষ্ট্রে তা বল্গাহীন ভাবেই বেড়েছে। গোড়া থেকেই এই রাজ্য কার্যত সংক্রমণের শীর্ষে ছিল। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, এই রাজ্য নিয়ে সারা দেশের শঙ্কা বেড়েছে। সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন দু’লক্ষ ১৭ হাজার ১২১ জন। তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল এক লক্ষ ১৮ হাজার ৫৯৪ জন। রাজধানী দিল্লিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল এক লক্ষ দু’হাজার ৮৩১ জন।
৩৭ হাজার ৫৫০ সংক্রমণ নিয়ে গুজরাত ও ২৯ হাজার ৯৬৮ আক্রান্ত নিয়ে উত্তরপ্রদেশ, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে। তেলঙ্গানা, কর্নাটক, পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান ও অন্ধ্রপ্রদেশের মোট আক্রান্ত ২০ হাজারে গণ্ডি পার করে ছুটে চলেছে। তেলঙ্গানা (২৭,৬১২), কর্নাটক (২৬,৮১৫), পশ্চিমবঙ্গ (২৩,৮৩৭), রাজস্থান (২১,৪০৪) ও অন্ধ্রপ্রদেশে (২১,১৯৭) জন আক্রান্ত হয়েছেন। হরিয়ানা (১৭,৯৯৯), মধ্যপ্রদেশ (১৫,৬২৭), বিহার (১২,৫৭০) ও অসমে (১২,৫২২) রোজ দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে ওড়িশা, জম্মু ও কাশ্মীর, পঞ্জাব, কেরল, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যগুলি।
লকডাউন উঠে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গেও নতুন করে অনেক বেশি সংক্রমণ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এই বৃদ্ধির জেরে মোট আক্রান্ত হলেন ২৩ হাজার ৮৩৭ জন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মোট ৮০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২৫ জনের। যা একদিনের নিরিখে সর্বোচ্চ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)