দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
গত ২ দিন ধরে ৪৪ হাজারের ঘরে থাকার পর শুক্রবার দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ নামল ৪৩ হাজারের ঘরে। দৈনিক মৃত্যুও নামল ৫০০-র নীচে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হওয়ার থেকে নতুন সংক্রমণ বেশি হওয়ায় বেড়েছে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ৮২ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৯৩ লক্ষ ৯ হাজার ৭৮৭ জন। এই সংখ্যক আক্রান্ত নিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান ভারতের। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকার মোট আক্রান্ত ১ কোটি ছাড়িয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখনও অবধি সেখানে ১ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। অক্টোবরের শেষ থেকেই আমেরিকাতে বাড়ছিল দৈনিক সংক্রমণ। গত ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে তা রোজই ১ লক্ষ ছাড়াচ্ছে। আজ সেখানে দৈনিক সংক্রমণ ১ লক্ষ ১২ হাজার। তুলনায় তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে দৈনিক সংক্রমণ মাস খানেক ধরে অনেকটাই কম। লাতিন আমেরিকার ওই দেশে এখন পর্যন্ত ৬১ লক্ষ ৮০ হাজার জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
করোনাভাইরাস এখনও অবধি ভারতে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ৭১৫ জনের প্রাণ কেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মারা গিয়েছেন ৪৯২ জন। দেশের মোট মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশই মহারাষ্ট্রে। সেখানে প্রাণ গিয়েছে ৪৬ হাজার ৮১৩ জনের। দেশের মৃত্যু তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুতে তা সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ। এ মাসে সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে দিল্লিতে বেড়েছে দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯১ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। যা গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্ত এবং মৃত্যু বৃদ্ধির মধ্যেই স্বস্তিদায়ক দেশের সুস্থতার হার। ভারতে কোভিড আক্রান্তদের সুস্থ হওয়া শুরু থেকেই আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের থেকে বেশি। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৮৭ লক্ষ ১৮ হাজার ৫১৭ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। যা গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। দেশের মোট আক্রান্তের সাড়ে ৯৩ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সুস্থ হয়েছেন ৩৯ হাজার ৩৭৯ জন। নতুন আক্রান্তের থেকে সুস্থ বেশি হওয়ায় অক্টোবরের শুরু থেকেই কমছিল সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। কিন্তু গত ৩ দিনের পরিসংখ্যান এই প্রবণতার পরিপন্থী। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। যার জেরে দেশে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ছাড়াল।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় তা ৩.৮১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা পরীক্ষা হয়েছে ১১ লক্ষ ৩১ হাজার ২০৪ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
দেশের অধিকাংশ রাজ্যেই দৈনিক সংক্রমণ গত এক মাসে কমেছে। কিন্তু দিল্লি (৫,৪৭৫) এবং কেরলে (৫,৩৭৮) আজও তা ঊর্ধ্বমূখী। বেশ কয়েকদিন কম থাকার পর গত কয়েকদিন ধরে মহারাষ্ট্রেও দৈনিক সংক্রমণও ৬ হাজার ছাড়াচ্ছে। অন্য দিকে রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্যগুলিতে শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুব ধীরে হলেও ধারাবাহিক ভাবে বাড়ছে আক্রান্ত। বেশ কিছু দিন কম থাকার পর উত্তরপ্রদেশেও তা বাড়ছে।
পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা হলেও আগের থেকে কম। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৫০৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ৪ লক্ষ ৭০ হাজার ৪৯৮ জন। যদিও তার মধ্যে ৪ লক্ষ ৩৭ হাজার ৬০৪ জন রোগী সুস্থও হয়েছেন। রাজ্যে দৈনিক মৃত্যুও ৫২। এ ভাবে বাড়তে বাড়তে রাজ্যে মোট মৃত্যু পৌঁছেছে ৮ হাজার ২২৪-এ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)