দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৮৮ জন। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
দৈনিক নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধিতে বেশ কয়েক দিন স্বস্তি দেওয়ার পর গত তিন দিন ধরে ফের বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার ৫২ হাজার, শুক্রবার ৫৫ হাজার নতুন আক্রান্ত হয়েছেন। আজ তা পৌঁছল ৫৭ হাজারে। সঙ্গে সংক্রমণ হারও গতকালের তুলনায় বাড়ল। এ সব আশঙ্কার মধ্যেও আক্রান্তের সুস্থ হয়ে ওঠা বেশ স্বস্তি দিচ্ছে। শুক্রবার এক দিনে দেশে করোনা পরীক্ষাও হয়েছিল সর্বোচ্চ। সেই তুলনায় আজ এক লক্ষের কম পরীক্ষা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৭ হাজার ১১৮ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। যার জেরে দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১৬ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৮৮ জন। গত চার দিনে প্রায় দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকায় নতুন আক্রান্ত প্রায় ৬৬ হাজার ও ব্রাজিলে ৫২ হাজার।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। শুক্রবার তা বেশ খানিকটা কমে নয় শতাংশের কম হয়েছিল। শনিবার তা কিছুটা বাড়ল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ১০.৮৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা পরীক্ষা হয়েছে পাঁচ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৮৯ জনের। শুক্রবার এই সংখ্যাটা ছিল ছ’লক্ষ ৪২ হাজার।
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। এখনও পর্যন্ত মোট ১০ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৭৪ জন করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৪.৫৩ শতাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৬৯ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
মৃত্যুর নিরিখে স্পেন, ফ্রান্স, ইটালিকে পিছনে ফেলে বিশ্বের পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। যদিও মৃত্যুর হার ওই সব দেশগুলির তুলনায় ভারতে অনেকটাই কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ৭৬৪ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৩৬ হাজার ৫১১ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ১৪ হাজার ৯৯৪ জন। মৃত্যুর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা দিল্লিতে প্রাণ গিয়েছে তিন হাজার ৯৬৩ জনের। তিন হাজার ৯৩৫ জনের মৃত্যু নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে তামিলনাড়ু।
গুজরাতে দু’হাজার ৪৪১ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। জুলাই জুড়েই কর্নাটকেও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। দক্ষিণের এই রাজ্যে মোট মৃত দু’হাজার ৩১৪ জন। উত্তরপ্রদেশ (১,৬৩০), পশ্চিমবঙ্গ (১,৫৮১) ও অন্ধ্রপ্রদেশে (১,৩৪৯) মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে রোজদিন বেড়েই চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ (৮৬৭), রাজস্থান (৬৭৪), তেলঙ্গানা (৫১৯), হরিয়ানা (৪২১), পঞ্জাব (৩৮৬), জম্মু ও কাশ্মীর (৩৭৭), বিহার (২৯৬), ওড়িশা (১৭৭) ও ঝাড়খণ্ড (১০৬)। বাকি রাজ্যগুলিতে মৃতের সংখ্যা এখনও ১০০ পেরোয়নি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
শুরু থেকেই মহারাষ্ট্র সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে। সে রাজ্যে মোট আক্রান্ত ইতিমধ্যেই চার লাখ ছাড়িয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত দু’লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৫৯ জন। গত কয়েক দিন ধরে রোজ প্রায় দশ হাজার করে নতুন সংক্রমণ হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশে। যার জেরে দক্ষিণের এই রাজ্য উঠে এল সংক্রমণ তালিকায় তৃতীয় স্থানে। সেখানে এখন মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ৪০ হাজার ৯৩৩ জন। জুলাই জুড়েই রাজধানী দিল্লিতে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধিতে বেশ খানিকটা লাগাম পড়েছে। যার জেরে সেখানে দৈনিক আক্রান্ত বৃদ্ধি এক হাজারের ঘরেই সীমাবদ্ধ। রাজধানীতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৯৮ জন। পঞ্চম তালিকায় থাকা কর্নাটকে মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লক্ষ ২৪ হাজার ১১৫ জন।
উত্তরপ্রদেশ (৮৫,৪৬১), পশ্চিমবঙ্গ (৭০,১৮৮), তেলঙ্গানা (৬২,৭০৩), গুজরাত (৬১,৪৩৮) ও বিহারে (৫১,২৩৩) আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দিন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান (৪১,২৯৮), অসম (৪০,২৬৯), হরিয়ানা (৩৪,৯৬৫), ওড়িশা (৩১,৮৭৭), মধ্যপ্রদেশ (৩১,৮০৬), কেরল (২৩,৬১৩), জম্মু ও কাশ্মীর (২০,৩৫৯), পঞ্জাব (১৬,১১৯) ও ঝা়ড়খণ্ড (১০,৯৫৮)। ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, ত্রিপুরার মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত এখনও দশ হাজারের কম।
পশ্চিমবঙ্গেও রোজদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্ত। শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুসারে, নতুন করে দু’হাজার ৪৯৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ৭০ হাজার ১৮৮ জন। গত তিন দিন ধরে রাজ্যে সংক্রমণের হার ১৩ শতাংশের আশে পাশে। মৃত্যুর ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে রাজ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। যার জেরে রাজ্যে করোনার কবলে পড়ে প্রাণ হারালেন মোট এক হাজার ৫৮১ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)