দেশে মোট ৮৩ হাজার ১৯৮ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনাভাইরাস। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফের ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেন। একদিনের নিরিখে যা এখনও অবধি সর্বোচ্চ। সেই সঙ্গে সংক্রমণ হার ফের সাড়ে আট শতাংশ ছাড়িয়ে গেল। গত কয়েক মাস ধরেই দেশে দৈনিক মৃত্যু হচ্ছে এক হাজারের বেশি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৯৭ হাজার ৮৯৪ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ এর আগে আক্রান্ত হননি। ওই সময়ের মধ্যে আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ২৫ হাজার ৫২৫ ও ৩৬ হাজার ৮২০ জন। আমেরিকা ও ব্রাজিলের তুলনায় ভারতের দৈনিক সংক্রমণ প্রায় তিন গুণ বেশি। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
বুধবার ৯৭ হাজার বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৫১ লক্ষ ১৮ হাজার ২৫৩ জন। প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকায় মোট আক্রান্ত ৬৬ লক্ষ ২৯ হাজার ও তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট আক্রান্ত ৪৪ লক্ষ ১৯ হাজার।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটক— দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে দেশের মধ্যে এগিয়ে এই তিনটি রাজ্য। গত কয়েক দিন নিয়ন্ত্রণে থাকার পর মহারাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণ ২৩ হাজার ছাড়িয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশে তা ন’হাজারের কম। গত ক’দিনে কর্নাটকে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা একটু কমেছিল। আজ তা আবার সাড়ে ন’হাজারের বেশি। উত্তরপ্রদেশে দৈনিক সংক্রমণ ছ’হাজারের বেশি। দিল্লিতেও সংখ্যাটা চার হাজারের উপরে। বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা একই গণ্ডিতে আবদ্ধ আছে। কিন্তু ওড়িশা ও ছত্তীসগঢ়ে দৈনিক সংক্রমণ আজও লাগামছাড়া। অসম, কেরল, পঞ্জাব, তেলঙ্গানা হরিয়ানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ গুজরাতের মতো রাজ্যগুলির দৈনিক সংক্রমণ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তার কারণ রয়েছে।
আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির তুলনায় মৃত্যুর হার কম হলেও, ভারতে দিন দিন বাড়ছে মোট মৃত্যুর সংখ্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ১৩২ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৮৩ হাজার ১৯৮ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ৩০ হাজার ৮৮৩ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত্যু হয়েছে সাড়ে আট হাজার জনের। তৃতীয় স্থানে থাকা কর্নাটকে মৃতের সংখ্যা সাত হাজার ৫৩৬। অন্ধ্রপ্রদেশেও মোট মৃত পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে বাড়ছে। দেশের রাজধানীতে সংখ্যাটা চার হাজার ৮৩৯। উত্তরপ্রদেশ (৪,৬৯০), পশ্চিমবঙ্গ (৪,১২৩), গুজরাত (৩,২৫৬) ও পঞ্জাব (২,৫৯২) মৃত্যু তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ (১,৮৪৪), রাজস্থান (১,২৭৯), হরিয়ানা (১,০৪৫), তেলঙ্গানা (১,০০৫) ও জম্মু ও কাশ্মীরে (৯৩২) মোট মৃত্যু বেড়ে চলেছে। এর পর তালিকায় রয়েছে বিহার, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, অসম, কেরল, উত্তরাখণ্ড, পুদুচেরী, গোয়া, ত্রিপুরার মতো রাজ্যগুলি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যার মধ্যেই আশার আলো কোভিড রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠা। এখনও পর্যন্ত দেশে মোট ৪০ লক্ষ ৯ হাজার ৯৭৬ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের সাড়ে ৭৮ শতাংশের বেশি সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সুস্থ হয়েছেন ৮২ হাজার ৭১৯ জন।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। গত দু’দিন ধরে দেশের সংক্রমণ হার ৮ শতাংশের নীচে। আজ তা ৮.৬১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে পরীক্ষা হয়েছে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬১৩ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যু— দু’টি তালিকাতেই শুরু থেকে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে মোট আক্রান্ত ১১ লক্ষ ২১ হাজার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অন্ধ্রপ্রদেশে পাঁচ লক্ষ ৯২ হাজার। তামিলনাড়ুতে মোট পাঁচ লক্ষ ১৯ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন। চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে মোট সংক্রমিত চার লক্ষ ৮৪ হাজার। উত্তরপ্রদেশেও সংখ্যাটা তিন লক্ষ ৩০ হাজারে পৌঁছেছে। দিল্লিতে দু’লক্ষ ৩০ হাজার। পশ্চিমবঙ্গে তা দু’লক্ষ ১২ হাজার। বিহার, তেলঙ্গানা ও ওড়িশাতে এক লক্ষ ৬০ হাজার পার করেছে। অসমে এক লক্ষ ৪৮ হাজার। গুজরাত, কেরল ও রাজস্থানেও এক লক্ষ ছাড়িয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। হরিয়ানাতেও আজ মোট আক্রান্ত এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। মধ্যপ্রদেশে মোট আক্রান্ত এক লক্ষের দোরগোড়ার দাঁড়িয়ে। পঞ্জাব (৮৭ হাজার), ছত্তীসগঢ় (৭৩ হাজার), ঝাড়খণ্ড (৬৬ হাজার), জম্মু ও কাশ্মীরে (৫৮ হাজার) মোট আক্রান্ত উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।
পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণ বেশ কিছু দিন ধরে তিন হাজারের বেশি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে তিন হাজার ২৩৭ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন দু’লক্ষ ১২ হাজার ৩৮৩ জন। যদিও এর মধ্যে এক লক্ষ ৮৪ হাজারেরও বেশি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। করোনার কবলে এ রাজ্যে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন চার হাজার ১২৩ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)