দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
কোনও কোনও দিন ১০ হাজারের নীচে নামলেও দেশের দৈনিক করোনা সংক্রমণ ১১-১২ হাজারের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। দৈনিক মৃত্যু বেশ কিছু দিন ১০০-র নীচে থাকার পর বৃহস্পতিবার তা ১০০ ছাড়াল। বৃহস্পতিবার বাড়লেও দেশে মোট সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দেড় লক্ষের কমই রয়েছে। সুস্থ ৯৭ শতাংশেরও বেশি। চুম্বকে এটাই দেশের করোনা-চিত্র।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৯২৩ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, এখনও অবধি দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৮ লক্ষ ৭১ হাজার ২৯৪ জন। মোট আক্রান্তের নিরিখে বিশ্বে প্রথম আমেরিকা। সেখানে মোট আক্রান্ত ২ কোটি ৭২ লক্ষ পেরিয়েছে। গত বছরের নভেম্বরের শুরু থেকেই লক্ষাধিক লোক রোজ আক্রান্ত হচ্ছিলেন সে দেশে। গত ৪ দিন ধরে তা ১ লক্ষের নীচে রয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলেও দৈনিক সংক্রমণ নির্দিষ্ট হারে বাড়ছে। সেখানে মোট আক্রান্ত সাড়ে ৯৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
করোনাভাইরাস দেশে এখনও অবধি ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩৬০ জনের প্রাণ কেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক মৃত্যু ১০৮। ৫ দিন পর দৈনিক মৃত্যু ১০০ ছাড়াল। দেশে মোট মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশই মহারাষ্ট্রে (৫১,৩৯০)। কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুতে তা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। দিল্লিতে তা সাড়ে ১০ হাজার পার করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও এই সংখ্যা ১০ হাজার পেরিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে সাড়ে ৮ হাজার এবং অন্ধ্রপ্রদেশে তা ৭ হাজার ছাড়িয়েছে। পঞ্জাবেও মোট মৃত্যু সাড়ে ৫ হাজারের বেশি। গুজরাত, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, হরিয়ানাতেও মৃত্যু ৩-৪ হাজারের বেশি।
এ সবের পাশাপাশি দেশে সুস্থতার হার শুরু থেকেই বেশি। ১ কোটি ৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৭২ জন ইতিমধ্যেই সুস্থ। মোট আক্রান্তের ৯৭ শতাংশের বেশি সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৭৬৪ জন। এই সুস্থতার জেরে কমছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। কমতে কমতে দেড় লক্ষের নীচে নেমেছে। দেশের এখন সক্রিয় রোগী মাত্র ১ লক্ষ ৪২ হাজার ৫৬২ জন। যদিও প্রায় এক মাস পর গত ২৪ ঘণ্টায় সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১ হাজার বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা হয়েছে ৬ লক্ষ ৯৯ হাজার ১৮৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সংক্রমণের হার ১.৮৫ শতাংশ।
কেরল বাদে দেশের অন্য রাজ্যগুলিতে নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে দৈনিক সংক্রমণ। একটানা বাড়তে বাড়তে ১০ লক্ষের দিকে যাচ্ছে সে রাজ্যের আক্রান্ত। সাড়ে ২০ লক্ষের বেশি আক্রান্ত নিয়ে মহারাষ্ট্র প্রথম হলেও সেখানে দৈনিক সংক্রমণ আড়াই হাজারের আশপাশেই থাকছে। করোনা সংক্রমণ যখন তুঙ্গে, তখন একদিনে ২০ হাজারের বেশি লোক আক্রান্ত হচ্ছিলেন। সেই পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
পশ্চিমবঙ্গেও দৈনিক সংক্রমণ ২০০-র নীচেই থাকছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৯ জন। এ রাজ্যে মোট আক্রান্ত ৫ লক্ষ ৭১ হাজার ৮১৫ জন। যদিও এর মধ্যে ৫ লক্ষ ৫৭ হাজার ২০৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)