পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা রাহুল গাঁধীর। শনিবার দিল্লির সুখদেব বিহার এলাকায়। —নিজস্ব চিত্র
ধার দিয়ে লাভ হবে না। প্রয়োজন পকেটে টাকা।
এই যুক্তিতেই প্রধানমন্ত্রীকে ত্রাণ প্রকল্পের অভিমুখ বদলানোর আর্জি জানালেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। ফের বললেন, “কেন্দ্রের ত্রাণ প্রকল্প ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনায় ঠাসা। কিন্তু চরম দুর্দশায় ভোগা পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ হারানো কর্মী, সঙ্কটে জেরবার চাষি এবং সমস্ত দরিদ্র মানুষের এই মুহূর্তে প্রয়োজন হাতে টাকা। একমাত্র তবেই তাঁরা এই কঠিন সময়ে টিকে থাকতে পারবেন। চাকা ঘুরবে অর্থনীতির।” যদিও শনিবার ত্রাণ প্রকল্পের চতুর্থ কিস্তিতেও তেমন কোনও ঘোষণা চোখে পড়েনি।
সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাংবাদিক সম্মেলনের পরে বাড়ির রাস্তা ধরা পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতেও এ দিন বেরিয়ে পড়েছিলেন রাহুল। দিল্লির সুখদেব বিহারে রাস্তার পাশে বসেই কথা বলেন অম্বালা থেকে ঝাঁসির দিকে হাঁটতে থাকা এক দল শ্রমিকের সঙ্গে। তাঁদের কাছে শোনেন পঞ্চাশ দিনের লকডাউনে ঠিক ভাবে খেতে না-পাওয়ার কথা। কংগ্রেসের অভিযোগ, রাহুল কথা বলার পরেই ওই কর্মীদের অনেককে আটক করে পুলিশ। তবে পুলিশ তা অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন: বিনিয়োগবন্ধু রাজ্যের তালিকা তৈরি হচ্ছে: নির্মলা
লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচনী ইস্তাহারেই ‘ন্যায়’ প্রকল্পের কথা বলেছিলেন রাহুল। দেশের গরিব মানুষকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সেখানে। করোনা-সঙ্কটের সময়ে ফের সেই দাবি জোর গলায় তুলেছেন তিনি। বলেছেন, আপাতত কয়েক মাস (অন্তত ৩ থেকে ৬) দেশের সব থেকে দরিদ্র ৫০ শতাংশকে ফি মাসে ৭,৫০০ টাকা করে দিক মোদী সরকার। করোনার সুনামি থেকে সাধারণ মানুষ এবং দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে এ ছাড়া গতি নেই বলেই কংগ্রেসের দাবি।
আরও পড়ুন: ‘আপনার সাইকেলটি নিয়ে চললাম, আমায় ক্ষমা করবেন’
এ দিনও সেই প্রসঙ্গ টেনে রাহুলের বক্তব্য, “এই সঙ্কটের সময়ে সরকার একের পর এক ঋণ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করে চলেছে। এ কি মহাজনি কারবারের সময়?... এখন সবার আগে জরুরি পরিযায়ী শ্রমিক, চাষি, মজুর, দরিদ্র মানুষের হাতে টাকা দেওয়া। একমাত্র তবেই তাঁরা টিকে থাকতে পারবেন। চাহিদা হবে চাঙ্গা। ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।” তাঁর আর্জি, সরকার প্রয়োজনে ন্যায় প্রকল্পের নাম বদলে দিক। কিন্তু হাতে নগদ দেওয়ার বন্দোবস্ত করুক। দীর্ঘ মেয়াদি আর্থিক পরিকল্পনা, সাহসি সংস্কার — সব হোক। কিন্তু সবার আগে বাঁচুক সাধারণ মানুষ আর ছোট-মাঝারি শিল্প। দেশের ৪০ শতাংশ কর্মসংস্থানই হয় যেখানে। এই মুহূর্তে ধার নয়, টিকে থাকতে এঁদের নগদ টাকাই প্রয়োজন। সেই সঙ্গে একশো দিনের বদলে দু’শো দিনের কাজ পাওয়ার অধিকারের পক্ষেও ফের সওয়াল করেছেন তিনি।
প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির দাবি, দরিদ্রদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা দিতে খরচ হবে ৬৫-৭০ হাজার কোটি টাকা। যা সরকারের অসাধ্য নয়। কিন্তু এই পথে না-হাঁটলে আগামী দিনে ধেয়ে আসা সুনামিতে দেশের অর্থনীতি তলিয়ে যেতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা।